বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জনশক্তির রপ্তানির প্রভাব
- 27-Mar-2022 12:53AM
- Zahidul Islam
- 1443
প্রথম অধ্যায়
ভূমিকা
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত হচ্ছে জনশক্তি রপ্তানির খাত। দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ এখন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তারা তাদের শ্রমলব্ধ অর্থ দেশে পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে আরো গতিশীল করছে। বলতে গেলে জনশক্তি রপ্তানি খাত বাংলাদেশের
অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে। এ অবস্থায় বিদেশে নিত্য-নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করে ব্যাপক হারে আরো জনশক্তি রপ্তানির পথ উন্মুক্ত করতে হবে। বিশেষ করে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করার পথ সুগম করার জন্য মন্ত্রণালয় এবং কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই বাংলাদেশের শ্রমবাজার সবচেয়ে বেশি সম্প্রসারিত। সেখানে চিকিৎসক এবং নার্সের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সেখানে ডাক্তার ও নার্স পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। প্রবাসে যেসব শ্রমিক কাজ করছে তাদের ৯৮ ভাগই অদক্ষ। বর্তমানে বছরে ১১ মিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাচ্ছে সরকার জনশক্তি রপ্তানি খাত থেকে। এ অর্থ কয়েকগুণ করা সম্ভব যদি দক্ষ জনশক্তি
দ্বিতীয় অধ্যায়
বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার, নার্স পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারলে জনশক্তি রপ্তানির আয় সহজেই বাড়ানো যায়।
বিদেশের বাজারটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। যেসব জনশক্তি রপ্তানি করে তারা শুধু দক্ষ জনশক্তি তৈরিই করে না তাদের কীভাবে বিদেশে পাঠানো যায় সে ব্যাপারেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু আমাদের দেশে সংশিষ্টদের
মধ্যে এ ব্যাপারে কোনো তৎপরতা তেমন কোনো তৎপরতা নেই। এ কারণে দক্ষ জনশক্তির শ্রমবাজার প্রায় হারাতে বসেছে বাংলাদেশ।
জনশক্তি রপ্তানীর চালচিত্র
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো চিকিৎসক ও নার্সের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ৬-৭ বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক-নার্স পাঠানো বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ ২০০৭ সালে সরকারিভাবে বোয়েসেলের মাধ্যমে সৌদি আরবে চিকিৎসক পাঠানো হয়। কিন্তু এরপর আর গত ৬ বছরে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলাদেশ ওভারসিস এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে কোনো চিকিৎসক-নার্সের নিয়োগ হয়নি। ১৯৮৪ সালে বোয়েসেল প্রতিষ্ঠার পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় চিকিৎসক ও নার্সদের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। এ সময়ে শুধু সরকারি পর্যায়ে নয়থ বেসরকারি পর্যায়েও ডাক্তার-নার্স পাঠানো হতো। কিন্তু ২০০৭ সাল থেকে আকস্মিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যে ডাক্তার-নার্সের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সরকারিভাবে নতুন করে ডাক্তার-নার্স প্রেরণে আর কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
বর্তমানে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কাতার, ওমান, কুয়েত, ইরাক, লিবিয়ায় ডাক্তার-নার্সদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিককালে সৌদি সরকার সে দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরে ব্যাপক বিনিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়েছে। ফলে চিকিৎসক-নার্স ও অন্যান্য দক্ষ জনশক্তির ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ওমান, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশ ডাক্তার-নার্স নেয়ার জন্য ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন, নেপালের মতো দেশের দিকে ঝুঁকছে। অথচ এ ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হলে বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় এ দক্ষ জনশক্তির বাজার ধরতে পারত।
মধ্যপ্রাচ্যে দক্ষ জনশক্তির যে বাজার সৃষ্টি হয়েছে সে সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য অবশ্যই তৎপরতা চালাতে হবে। এতে একদিকে বিদেশে দেশের ডাক্তার-নার্সদের কর্মসংস্থান হবে অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও বৃদ্ধি পাবে। আর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন যত বাড়তে দেশের জন্য তা ততই মঙ্গল। সরকার দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির জন্য সারাদেশে ট্রেনিং সেন্টার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া বর্তমানে দেশে ২৩টি সরকারি ও ৫৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এসব মেডিকেল কলেজ থেকে বছরে ৫ হাজার ডাক্তার বের হচ্ছে। পাশাপাশি দেশে প্রায় ১০ হাজার নার্স বেকার
তৃতীয় অধ্যায়
অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় রয়েছে বাংলাদেশের একটি বড় শ্রমবাজার। এ বাজার যাতে স্থায়ী বাজারে পরিণত হয় এ জন্য বাংলাদেশ সরকার কাজ করে যেতে হবে। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে মালয়েশিয়ায় কলিং ভিসায় কর্মী নেয়া শুরু করলে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
জনগনের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন
বেসরকারি পর্যায়ে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বেশি টাকা নেয়া, দালাল কর্তৃক প্রতারিত হওয়া, মালয়েশিয়ার আউটসোর্সিং কোম্পানি কর্তৃক প্রতারণাথ চুক্তি অনুযায়ী যথাযথভাবে কাজ না দেয়া ইত্যাকার নানা অভিযোগের প্রেক্ষাপটে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেয় চার বছর আগে।
মালয়েশিয়ায় বিপুল পরিমান কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন আছে। কিন্তু তারা চায় অভিবাসন ব্যয় কমাতে। অভিবাসন ব্যয় কমলে মালয়েশিয়ায় যেতে একজন শ্রমিকের সর্বসাকুল্যে খরচ হবে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। খরচ কম হওয়ায় তিন বছরে একজন শ্রমিক তা পুষিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু দালালচক্র বা মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ হলে অভিবাসন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। এতে একজন শ্রমিক বিদেশ যেতে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ করে। এ টাকা উঠাতেই তাদের কয়েক বছর লেগে যায়। তারপরও প্রতারণার ফাঁদ তো রয়েছেই।
আশার কথা হচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া শুরু করেছে। এদের খরচ হয়েছে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। যা কিছুদিন আগেও ছিল স্বপ্নের ব্যাপার। সরকার পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই শ্রমিকদের বাছাই করেছে। প্রত্যেক জেলা থেকেই যাতে শ্রমিকরা স্বল্পমূল্যের এ প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে সে জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়।
এখন মালয়েশিয়ায় সরকারিভাবে জনশক্তি রপ্তানির যে ব্যবস্থাটি নিশ্চিত হলো তা এক বিরাট সমস্যার সমাধান-সূত্র সবার সামনে উন্মোচিত করেছে। এখন এ সুযোগটির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের মধ্যেই এ খাতের ভবিষ্যৎ শ্রীবৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ নির্ভর করছে। সরকার যদি মালয়েশিয়ায় তাদের প্রতিশ্রুত ৫ লাখ জনশক্তি রপ্তানির এ উদ্যোগটি সফল ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে তার সেই সক্ষমতা এ খাতের উৎকর্ষ বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে। সে ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা অন্যান্য দেশেও সরকারিভাবে জনশক্তি রপ্তানির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।
সভ্যতার ইতিহাস অভিবাসনের ইতিহাস। এ জন্য মানুষ যেখানে অন্ন এবং বাসস্থানের জন্য অনুকূল পরিবেশ পেয়েছে সেখানেই তার আবাস গেড়েছে। দেখা যায় প্রায়ই বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন অবৈধ পথে শ্রমিকরা বিদেশ যাওয়ার সময় ধরা পড়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব মানুষ দুই পয়সা আয় করার জন্য বিদেশ বিভূঁইয়ে পাড়ি জমায়। অর্থাৎ বিদেশে শ্রমিকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সরকার সেই বাজারটি ধরতে পারছে না।