যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা

 প্রথম অধ্যায়

ভূমিকা
       আইন ও শাসন বিভাগ এবং কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বন্টনের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সরকারের একটি রূপ হলো যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার । এক কেন্দ্রীক সরকারের বিপরীত শাসন ব্যবস্থা হলো যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা । 

এক কেন্দ্রীক সরকারের সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীক সরকারের হাতে অর্পন করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় ক্ষমতা কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে সংবিধানের বিধানুসারে বন্টন করা হয়ে থাকে ।

 কেন্দ্র বা প্রদেশ কোন সরকারই অপর সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে না । যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার গঠনের ক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতি চালু আছে । যার একটি হল প্রশাসনিক সুবিধার জন্য অপরটি এক কেন্দ্রিক রাষ্ট্রকে কয়েকটি স্বতন্ত্র অঙ্গরাজ্যে বিভক্ত করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র গঠন করা যায় । 
যাকে বলা হয় বিভক্তি করণ প্রক্রিয়া । অপর পদ্ধতি হলো কয়েকটি সার্বভৌম রাষ্ট্র নিজেদের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র গঠন করতে পারে একে বলা হয় সংহতি সাধন প্রক্রিয়া ।

                      
   ২য় অধ্যায়
তাত্ত্বিক কাঠামো 
      আইন ও শাসন বিভাগ এবং কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বন্টনের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সরকারের একটি রূপ হলো যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার । কেন্দ্রীয় ও অঙ্গরাজ্য সমূহের মধ্যে ক্ষমতা বন্টনের দিক থেকে সরকারকে দুটো ভাগে ভাগ করা যায় । যেমনঃ

১.    এককেন্দ্রীয় সরকার
২.     যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ।
নি¤েœ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের উৎপত্তি ও শাব্দিক অর্থ বিবেচনা করা হলো ।

যুক্তরাষ্ট্রের ইংরেজি শব্দ  ঋবফবৎধঃরড়হ  । যার উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ ঋড়বফঁং থেকে । আর কেয়েডাস অর্থ সন্ধি বা মিলন । অর্থাৎ শব্দগত  অর্থে কতগুলো রাষ্ট্রের মধ্যে সন্ধি বা মিলনের ফলে যে নতুন রাষ্ট্রের উদ্ভত ঘটে তাকে যুক্তরাষ্ট্র বলে । রাষ্ট্রবিজ্ঞানে  যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের অর্থ ও তাৎপর্য ভিন্ন ।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার এমন এক সরকারকে বুঝায় যেখানে সংবিধানের মাধ্যমে কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্য সমূহের মধ্যে ক্ষমতা বন্টন করে দেওয়া হয় । যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার সম্পর্কে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন । 
     নি¤েœ তাদের মতামত উল্লেখ করা হল ।

(১)    বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফাইনার তার “ঞযব ঃযবড়ৎু ধহফ ঢ়ৎধপঃরপব ড়ভ সড়ফবৎহ মড়াবৎহসবহঃ” গ্রন্থে বলেছেন ‘‘ যুক্তরাষ্ট্র এমন এক সরকার ব্যবস্থা যেখানে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার কিছু অংশ আঞ্চলিক সংস্থায় ন্যস্ত হয় এবং অন্যান্য অংশ ঐসব আঞ্চলিক সংঘের সমব্যয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় সংস্থায় ন্যস্ত থাকে । [ রাজনৈতিক তত্ত্ব ও সংগঠন ‘‘ এস এম নাসির উদ্দিন পৃষ্ঠা নং ২৯৭ ] ।  
(২)      এ.জি ডাইসির মতে “ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার হলো জাতীয় ও অঙ্গরাজ্যের অধিকারের মধ্যে সমন্বয় সাধনের একটি রাজনৈতিক কৌশল বিশেষ” । [ রাজনৈতিক তত্ত্ব ও সংগঠন ‘‘ এস এম নাসির উদ্দিন পৃষ্ঠা নং ২৯৭ ] ।  
(৩)    কে সি হুইলার বলেন “ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাষনতন্ত্রে সরকারী ক্ষমতা কেন্দ্রটি সরকার ও আঞ্চলিক সরকার গুলোর মধ্যে এমন ভাবে বন্টন করা হয় যাতে উভয় ধরনের সরকার নিজ নিজ আইনগত ভাবে স্বাধীন থাকতে পারে ”। [ রাজনৈতিক তত্ত্ব ও সংগঠন ‘‘ এস এম নুর নবী পৃষ্ঠা নং ২৮৫ ] । 
(৪)    সি এফ স্টং এর মতে “অ ভবফবৎধষ ংঃধঃব রহ যিরপয ধ হঁসনবৎ ড়ভ পড়-ড়ৎফরহধঃবফ ধঃ ঁঃবং ঁহরঃবফ ভড়ৎ পবৎঃধরহ পড়সসড়হ ঢ়ঁৎঢ়ড়ং ” । [ রাজনৈতিক তত্ত্ব ও সংগঠন ‘‘ এস এম নাসির উদ্দিন পৃষ্ঠা নং ২৯৭ ] ।  
(৫)    মন্টেস্কু এর ভাষায় “ জবফবৎধষ মড়াবৎহসবহঃ রং ধ পড়হাৎঃরড়হ নু যিরপয ংবাবৎধষ ংরসরধষৎ ংঃধঃব ধমৎবব ঃড় নবপড়সব রহ সবসনধৎং ড়ভ ধ ষধৎমব ড়হব”। [ রাজনৈতিক তত্ত্ব ও সংগঠন ‘‘ এস এম নাসির উদ্দিন পৃষ্ঠা নং ২৯৭ ] ।


পরিশেষে বলা যায় যে যুক্তরাষ্ট্র হল এমন একটি শাসন ব্যবস্থা যাতে কতকগুলো প্রদেশ নিয়ে সাধারণ রাষ্ট্রে সংবিধানের ভিত্তিতে কেন্দ্র ও প্রদেশের ক্ষমতা বন্টিত হয় । এ ক্ষেত্রে  সাদারন বা কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক সরকার গুলো স্বতন্ত্র ও স্বাধীন  ।

                    ৩য় অধ্যায়

টার্ম পেপার রচনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য 
                  
           গবেষনা কর্মটি পরিচালনা করা হয় এমন একটি বিষয় নিয়ে যা গবেষনাকে গবেষনা করতে অনুপ্রেরণা যোগায় । গবেষনা মনে প্রাণে গবেষনা করতে পারে এ রকম একটি বিষয়ই টার্ম পেপারের জন্য দরকার । 
নি¤েœ টার্ম পেপারের গবেষনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হল ঃ-

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা বিরল কেননা এর পূর্বশর্ত বিরল এটা সম্পর্কে জানার জন্য টার্ম পেপার গবেষনাটি প্রস্তুত করা হলো ।

টার্ম পেপার রচনার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষনা কাজের অভিজ্ঞতা হয় ।
  টার্ম পেপারর গবেষনাটি আরো একটি অন্যতম লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো অর্নাস ২য় বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ন কাজ ।

উপরোক্ত  সকল লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

                           ৪র্থ অধ্যায়


যৌক্তিকতা       
        বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকার ব্যবস্থা তাদের সাফল্যের শর্তাবলি বিভিন্ন সরকার ব্যবস্থার দোষ গুন প্রবনতা ও সরকার ব্যবস্থার সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে ব্যাপক মাত্রায় গবেষনা পরিচালিত হলেও এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা বিরল,


 কেননা এর পূর্বশর্ত বিরল এ বিষয় নিয়ে তেমন একটি গবেষনা পরিচারিত হয় নি । তাই যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা বিরল কেননা এর পূর্বশর্ত বিরল এ বিষয় নিয়ে একটি রুচিশীল বিচার বিশ্লেষনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারনা প্রদান করা হলো ।


                               ৫ম অধ্যায়

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য ঃ-
                      আধুনিক সরকার হিসেবে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার কিছু স্বকীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে । যে গুলো অপরাপর সরকার ব্যবস্থার চাইতে বেশ ভিন্ন । নি¤েœ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য সমূহ তুলে ধরা হল  ।

১.    দ্বৈত সরকার ব্যবস্থা ঃ
               যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় দু- ধরনের সরকার বিদ্যমান । যথা ঃ কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকার । এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার সমগ্র দেশের শাসন কার্য পরিচালনা করে আর প্রাদেশিক সরকার নিজ নিজ প্রদেশের শাসনকার্য পরিচালনা  করে । উভয় সরকারই সংবিধান কর্তৃক প্রদত্ত সমতা লাভ করে এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে তারা স্বতন্ত্র স্বাধীন ও সমমর্যাদা সম্পন্ন।

২.    লিখিত সংবিধান ঃ
            যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে সুনির্দিষ্ট ভাবে ক্ষমতা বন্টনের সংবিধান লিখিত হয় । সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি ক্ষমতার পরিধি, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার প্রভৃত বিষয় লিখিত অবস্থায় থাকে ।  

৩.    দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান  
                    দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান অনুসরন যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য । এ ধরনের সংবিধান সাধারন সংখ্যাগরিষ্ঠতার সংশোধন করা যায় না বিধায় জটিল পদ্ধতি অনুসরন করতে হয় ।

৪.    ক্ষমতার বন্টনঃ
         যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আঞ্চলিক ক্ষমতার বন্টন । কেন্দ্রীয় সরকার ও আঞ্চলিক সরকার গুলোর মধ্যে  সংবিধানের আলোকে ক্ষমতা বন্টিত হয় । কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্বে পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, মূদ্রা সংক্রান্তি বিষয়, অর্থাৎ  রাষ্ট্রের সামগ্রিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহ রেখে  শিক্ষা, স্বাস্থ্য,গৃহায়ন,খাদ্য, ও সেবার ন্যায় আঞ্চলিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ বিষয় সমূহ প্রদেশিক সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হয় । 

৫. প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনঃ 
              ক্ষমতা বন্টনের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উৎপত্তি হলেও প্রাদেশিক সরকারগুলো সার্বভৌম থাকে না । বরং এগুলো সর্বাধিক স্বায়ত্বশাষন ভোগ করে । প্রাদেশিক  স্বায়ত্বশাসন যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য ।   

৬.সংবিধানের প্রাধান্য ঃ     
             যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় ।  এক কেন্দ্রীক সরকারে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে কেন্দ্রীয় বা আঞ্চলিক কোন সরকারের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত না হয়ে সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় ।

৭. দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা ঃ
                যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় সাধারনত দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা বিদ্যমান । উচ্চকক্ষ ও নি¤œকক্ষ, উচ্চকক্ষ সাধারণত অঙ্গরাজ্যে সমূহের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এবং নি¤œ কক্ষ জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধির সমন্বয়ে  গঠিত হয়  ।   

৮. দ্বৈত নাগরিকত্ব ঃ
               যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রে দ্বি নাগরিকত্ব  পরিলক্ষিত হয় । এক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক ফেডারেল সরকারের নাগরিকত্ব পাশাপাশি তার নিজস্ব অঙ্গরাজ্যের নাগরিকত্ব লাভ করে । 


৯. দ্বৈত আইনঃ 
              যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় দুই ধরনের আইন বিদ্যমান । একটি কেন্দ্রীয় অপরটি প্রাদেশিক আইন  । কেন্দ্রীয় ক্ষমতা বলে আইন প্রনয়ন করা হয় । এছাড়াও আইনসভার মাধ্যমে প্রাদেশিক আইন প্রনয়ন করা হয় । 


১০. বিচার বিভাগের প্রধান্য :
                  বিচার বিভাগের প্রাধান্য যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় অন্যতম  প্রধান মৌলিক বিষয় । এ ধরনের শাসন ব্যবস্থায় বিচার বিভাগ ও নিরপেক্ষতার পরিচয় দান করে  বিচার বিভাগ সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে ।
  সংবিধান এর ব্যাখা প্রসঙ্গে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে মত বিরোধ দেখা দিলে  বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গন্য হবে । 

১১. সম-মর্যাদাঃ
             যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় অঙ্গরাজ্য বা আঞ্চলিক সরকার গুলোর মধ্যে সমমর্যাদা বিদ্যমান থাকে । 
অর্থাৎ প্রত্যেক রাষ্ট্র এবং এর নাগরিকগন কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট সমমর্যাদা ও অধিকার পেয়ে থাকে । এসব ব্যাপারে কোন প্রকার বৈরী মৌনভাব পোষন করা হয় না । 
 
                          ৬ষ্ঠ অধ্যায়

 যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সফলতার শর্তাবলী  
               যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী । যাকে টিকিয়ে রাখতে হলে কতগুলো শর্ত অবশ্যই পালন করতে হয় । নি¤েœ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সফলতার শর্তাসমূহ প্রদত্ত হলো ঃ-

১. যুক্তরাষ্ট্রীয় মনোভাব ঃ
             এ ব্যবস্থাকে সাফল্য মন্ডিত করার প্রথম এবং প্রধান উপাদান হলো, অঙ্গরাজ্য গুলোকে একটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকার ইচ্ছা পোষন করতে হয় ।  কিন্তু অঙ্গরাজ্যগুলো যদি এ মনোভাব পোষন না করে তবে  যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভবপর নয় ।
 আবার শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকার ইচ্ছা পোষন করলেও চলবে না । সেই সাথে এদের আঞ্চলিক স্বাধীনতা রক্ষা এবং নিরাপদ রাখতে হবে ।
              
২.ভৌগলিক সান্নিধ্য ঃ 
          যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার এর সফলতার আরেকটি প্রধান অন্যতম শর্ত হলো ভৌগলিক সান্নিধ্য । সেসব অঙ্গরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র গঠন করতে আগ্রহী সেসব রাজ্যে ভৌগলিক সান্নিধ্য  মিল থাকা আবশ্যক ।  কেননা অঙ্গরাজ্যগুলো দুরবর্তী হলে একে আপরের নৈকট্য লাভ করতে পারে না । এজন্য ভৌগলিক সান্নিধ্য অপরিহার্য ।  
৩.জাতীয়তা বোধের সুদৃঢ় বন্ধন ঃ
              যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার  এর সফলতার আরেকটি উপাদান জাতীয়তা বোধের সুদৃঢ় বন্ধন  । যার কারণ হলো  জাতীয়তা বোধের সুদৃঢ় বন্ধন না থাকলে  রাষ্ট্রের সংহতি নষ্ট হয়ে যায় ।
 অধ্যাপক ডাইসী বলেন “ রাজ্যগুলোর মধ্যে ভৌগলিক, ঐতিহাসিক , বংশগত ও অন্যার্ন ঐক্য বিদ্যমান থাকতে হবে যেন প্রত্যেক জন এক জাতীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয় ।


৪. আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলঃ
           এ সময় কার ব্যবস্থাকে সার্থক করে তুলতে হলে সকলকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে । যুক্তরাষ্ট্রীয় আইন নীতি মানার মৌনভাবের উপরে বহুলাংশে নির্ভরশীল । কোনটি সংবিধান মোতাবেক কোনটি সংবিধান বর্হিভূত পরিচালিত হচ্ছে তা সুপ্রীমকোট বিচার করবে । 
এবং বিচারালয় কর্তৃক যেকোন সিদ্ধান্ত গৃহিত হোক তা মেনে চলার স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন ।

৫.    শাসনতন্ত্রের প্রাধান্য ঃ
            যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবন্থায় শাসনতন্ত্রকে দেশের সর্বোচ্চ ও পবিত্রতম আইন বলা হয় । এবং শাসন তন্ত্রই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অভিভাবক  এজন্য শাসনতন্ত্র যাতে সুস্পষ্ট হয়   তার জন্য এটি নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন । তাছাড়া এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে জাতির যেকোন জরুরি প্রয়োজনে যেন পরিবর্তন করা যায় । 


৬.    অঙ্গরাজ্যের সমতা:
                 যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার এর সফল করতে হলে যে সকল উপাদান তাদের রাজ্য গুলোকে একত্রিত করতে সবচে বেশি সাহায্য করে তার মধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সাদৃশ্য একান্ত উল্লেখযোগ্য ।
 অধ্যাপক হুইলার বলেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কায়েম করতে ইচ্ছুক তাদের মধ্যে অবশ্যই সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐক্য থাকা দরকার । আবার শুধুমাত্র অঙ্গরাজ্যের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সাদৃশ্য থাকলেই হবে না । তারা যাতে স্বৈরাচারী না হতে পারে সেদিকে সমান দৃষ্টি দিতে হবে ।

৭.    সমজাতীয়তার মনোভাব ঃ
                 যুক্তরাষ্ট্রীয় বিভিন্ন রাজ্যের অধিবাসীদের মধ্যে শিক্ষা, সংস্কৃতি, আচার আচরন ও রীতিনীতিগত ভাবে  এক ও অভিন্ন হতে হবে।
 বাহ্যিক উপাদানের সাথে ভাবগত ঐক্য এবং ঐকানুভুতির ভিত্তিতে এক জাতীয় ভাবের সৃষ্টি হয় । যা যুক্তরাষ্ট্রের সমজাতীয়তার মনোভাব সৃষ্টি করে ।
                            ৭ম অধ্যায়    

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের গুনাবলি ঃ-
                বহুল আলোচিত ও কৌশলগত কারনে বর্তমান সময়ের একটি জনপ্রিয় শাসন ব্যবস্থা হলো যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা ।  নি¤েœ এ ধরনের শাসন ব্যবস্থার গুনাবলী সমূহ আলোচনা করা হলো ।


১.কেন্দ্রিয় সরকারের দায়িত্ব হ্রাস ঃ
             যুক্তরাষ্ট্রীয় শাষন ব্যবস্থায় সংবিধানের আলোকে প্রদেশ গুলোকে দায়িত্ব বন্টন করা হয় । ফলে কেন্দ্রীয় সরকার অধিকতর গুরুত্বপর্ণ কাজে মনোযোগী হতে পারে । এর ফলে উভয় প্রতিষ্ঠানই সঠিক  ও সুচারু ভাবে কাজ প্ররিচালনা করতে পারে । 

২.    ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বৈরশাসন রোধ ঃ
                  কেন্দ্রিয় ও আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বন্টনের কালে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ক্ষমতার ভারসাম্য স্থাপিত হয় এবং সংবিধান অনুসারে প্রশাসন চালিত হয় । ফলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বৈরশাসন রোধ করা সম্ভব হয় । 
 

৩.শাসন ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি ঃ
             যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার  ব্যবস্থায়  দক্ষ প্রশাসন গড়ে তোলা সম্ভব হয় । কেননা এ ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে সাংবিধানিক ভাবে ক্ষমতা বন্টনের ফলে কোন সরকারের উপর অতিরিক্ত কার্যভার আরোপিত হয় না । 
ফলে সকলেই ক্ষমতার সাথে শাসন কার্যে মনোযোগী হতে  পারে  । এতে করে শাসন কার্যের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । 

৪.অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঃ
           যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জাতীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থের মধ্যে সমন্বয় সাধনের সুযোগ পায় । কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক সহযোগিতা ও সাহায্য করার মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারে  । ফলে জাতীয় অগ্রগতি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় । 

৫. পরীক্ষার সুযোগ ঃ
এর অন্যতম গুন হলো এখানে আইন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার সুযোগ থাকে । একটি অঙ্গরাজ্যের কোন একটি নতুন আইন প্রয়োগ করে তার কার্যকারিতা বা গুনাগুন যাচাই করা যায় এবং ভালো হলে তা অন্য রাজ্যে প্রয়োগ করা যায় ।


 ৬.জনগনের অংশগ্রহন ঃ 
            এ ধরনের শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন ঘটে । এতে  সার্বিকভাবে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাজে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাওয়া যায় । এর জন্য জনগনের অংশগ্রহন বৃদ্ধি পায় । 

৭. জাতীয় মর্যাদা বৃদ্ধি ঃ 
             যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার  ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের জাতীয় মর্যাদা বৃদ্ধি পায় । সুশাসন স্বদেশপ্রেম, নাগরিকদের মনস্তাত্ত্বিক সন্তুষ্টি, বৃহৎ রাষ্ট্রের নাগরিকত্বের গৌরব বোধ প্রভৃতি যুক্তরাষ্ট্রে অর্জিত হয় । 

৮.    বৃহৎ রাষ্ট্রের জন্য সহায়ক ঃ
         এরূপ শাসন ব্যবস্থা বৃহৎ রাষ্ট্রের জন্য উপযোগী । কারন বৃহৎ রাষ্ট্রকে একটি মাত্র কেন্দ্র থেকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা খুব বেশি কঠিন  ।   যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় প্রশাসনিক একক কে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র  ভাগে ভাগ করে শাসন কার্য পরিচারনা কার সহজ হয় ।
৯.    ক্ষতি ও অপচয় রোধ :  
              যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জাতীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থের মধ্যে সমন্বয় সাধনের সাথে সাথে ক্ষতি ও অপচয় রোধ করা সম্ভব হয় ।

১০ আতœরক্ষা ঃ 
        ক্ষুদ্র ও দূর্বল রাষ্ট্র গুলো ঐক্যবদ্ধ হলে শক্তি বৃদ্ধি পায় । ফলে যে কোন শত্রুর মোকাবেলা তারা আতœরক্ষা করতে পারে ।  
                           ৮ম অধ্যায় 

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের দোষসমূহ ঃ 
         যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় যেমন গুনাবলী রয়েছে তেমনি বেশ কিছু দোষ ত্রুটি রয়েছে । নি¤েœ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের দোষাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা হল । 

১.    দুর্বল শাসন ব্যবস্থা ঃ
         এ ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের কেউ  পূর্ন ক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ পায় না ।  অঙ্গরাজ্যগুলোর স্বাধীন সত্তা ও  স্বতন্ত্র স্বীকার করা হয় । কেন্দ্রীয় সরকার আঞ্চলিক সরকার গুলোকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না ।
 এরফলে সামগ্রিক ভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন সুদৃঢ় করতে পারে না । ফলে সরকার দুর্বল হয় । 

২.    পরস্পর বিরোধি আইন ঃ
          এরূপ শাসন ব্যবস্থায় অনেকগুলো রাজ্য সরকার এর অস্তিত্ব থাকায় পরস্পর বিরোধী আইন প্রণীত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে  । এ অবস্থায় বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন অসম্ভব হয়ে পড়ে । ফলে নানা রকম অশান্তি গোলযোগ সৃষ্টি হয় ।


৩.    ব্যয়বহুল ঃ
এই শাসন ব্যবস্থা ব্যয়বহুল । একটির পরিবর্তে একাধিক সরকার থাকে বলে যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিচালনা ব্যয় বহুল ।
 ফলে এটি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দুর্বল রাষ্ট্রের জন্য বেশ সমস্যার সৃষ্টি করে ।

৪.    জরুরী অবস্থার অনুপযোগী ঃ
       এই সরকার  ব্যবস্থা  জরুরী অবস্থার অনুপযোগী   । বিপদজনক পরিস্থির সৃষ্টি হলে এ সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না । ফলে অঙ্গরাজ্যের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয় । যা জাতীয় স্বার্থহানি ঘটায় । 

৫.    দায়িত্ব হীনতা ঃ 
               যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকার এবং আঞ্চলিক সরকার গুলোর মধ্যে ক্ষমতার বন্টন থাকে না ।  সরকার দ্বৈত বলে  দায়িত্ব হীনতার সম্ভাবনা থাকে । 

৬.    আদালতের ভূমিকা ঃ 
      এ শাসন ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতের প্রাধান্য থাকে । শাসন তন্ত্রের ব্যাখ্যা কারক ও অভিভাবক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত অনেক সময় রক্ষণশীল ভূমিকা পালন করে ।
 ফলে কোন প্রগতিশীল আইন প্রবর্তন করা যায় না ।

৭.    দীর্ঘ সূত্রতা ঃ 
             যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রীতা কাজ করে । বিধায় জরুরী ও সংকট কালে  দীর্ঘসূত্রীতা কারণে সংকট সমাধানে বিলম্ব হয় । 
কারন এ ব্যবস্থায় বিদ্যমান দ্বৈত প্রশাসন ও বিভিন্ন সরকারের মতামত ও সহযোগীতা পেতে অনেক সময় নষ্ট হয় ।


৮.    অনমনীয়তা ঃ 
             যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় অনমনীয়তা পরিলক্ষিত হয় । কারণ এ সংবিধানের ন্যায় প্রশাসনের কাঠামো দুষ্পরিবর্তনীয় । যে কারণে এগুলোকে সহজে পরিবর্তন করে প্রয়োজনের সাথে খাপ খাওয়া সম্বব হয় না । 
যার ফলে অন্যার্ন শাসন ব্যবস্থার চাইতে অনেক বেশি নমনীয়তার ভাব পরিলক্ষিত হয় । 


৯.    পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সমস্যা ঃ
       এ ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক সন্ধি চুক্তি প্রভৃতি পররাষ্ট্র সংকান্ত বিষয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয় । কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্য সমূহের মধ্যে মতাদর্শগত বিরোধ দেখা দিতে পারে । 

কেননা অঙ্গরাজ্যগুলো দৃষ্টিভঙ্গি এক নয় বলে পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ ও কার্যকারিতার সমস্যা দেখা দেয় ।

১০.শাসন ব্যবস্থা মন্থর গতিসম্পন্ন ঃ
                এরূপ শাসন ব্যবস্থার কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার গুলো পৃথক সরকার থাকার ফলে ক্ষমতা বন্টনের ব্যাপারে 
এবং বিভিন্ন সরকার এর  ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ জটিলতার সৃষ্টি হয় । 
আবার অনেক সময় কোন একটি বিশেষ কার্য সম্পাদনের দায়িত্ব কোন সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ অযথাই সময়ের অপচয় হয় ।


                     ৯ম অধ্যায়                  

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক প্রবনতা ঃ

                   সাম্প্রতিক কালে পৃৃথিবীর প্রায় সকল যুক্তরাষ্ট্রেই কেন্দ্রীকতার প্রতি এক প্রবল শোষন মূলক প্রবাহ দেখা দিচ্ছে । বিশে^র সকল যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় সরকার এর হাতে ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধির প্রসারতা প্রবনতা বেশ লক্ষনীয় । 
পাশাপাশি রাজ্য সরকার গুলো কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রনাধীন হয়ে পড়ছে । কেন্দ্রীয় সরকারগুলো তাদের এখতিয়ার কে ক্রমান্বয়ে বিকশিত করে তুলছে । আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রে এ প্রবনতাই
 কেন্দ্র প্রবনতা হিসেবে পরিচিত ।
যে সকল উপাদান কেন্দ্রীয় সরকারের অত্যাধিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে যেগুলো নি¤œরূপ ঃ

১.    যুদ্ধ ও সংঘাত ঃ 
      সংবিধানের আলোকে যুদ্ধের সময় কৌশল নির্ধারন, যুদ্ধ পরিচালনা, যুদ্ধের ব্যয় নির্ধারণ,জনগনের অর্থনৈতিক জীবন নিয়ন্ত্রন, উপাদান আমদানি ও রপ্তানি ইত্যাদি বিষয়ের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত । 

 লিপসন যুদ্ধময় পরিস্থিতিকে কেন্দ্রীয় করনের একটি বড় উপাদান বলে গন্য করেছেন । যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের উপর কর্তৃত্ব  ও নিয়ন্ত্রন আরোপ করছে এতে করে কেন্দ্রের অত্যাধিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে । 

২ যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি  ঃ
           বর্তমানে যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা প্রভূত উৎকর্ষ লাভ করছে । এ উৎকর্ষের সুবাদে আঞ্চলিকতা ও সংকীর্ণতা দূরীভুত হয়ে বৃহত্তর  জাতীয় ঐক্যের পথ সুগম হচ্ছে । 
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে কৃষি,শিল্প, আর্থিক লেনদেন ব্যবসা বাণিজ্যসহ সকল  আমদানি রপ্তানির পথ সুগম হচ্ছে । 

৩ কল্যানমূলক রাষ্ট্রের ধারনা ঃ
         আধুনিক রাষ্ট্র গুলোর কল্যাণমূলক  কার্যবলির পরিধি উত্তরাত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে । ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নাগরিকদের জন্য মৌল মানবিক চাহিদা পূরন ,জীবনমান উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা,বেকারত্ব, দারিদ্র মোচন সহ বুহুমুখী কল্যাণমূলক কার্যাবলি গ্রহন এর ফলে
 আঞ্চলিক সরকারের ক্ষমতা অনেকটা সংকুচিত হচ্ছে ।

৪ আঞ্চলিক সরকারের ব্যর্থতা ঃ
        যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি রাখতে রাজ্য সরকার গুলো বাধা দিতে সচেষ্ট হলেও বাস্তবে কেন্দ্রীয় সরকারের এই ক্ষমতা বৃদ্ধিকে রাজ্য সরকার গুলো প্রতিহত করতে ব্যর্থ হচ্ছে ।
 কারণ বিভিন্ন কারনে কেন্দ্রের প্রতি আঞ্চলিক সরকার নির্ভরশীল । এই নির্ভরশীলতাই কেন্দ্রের ক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম কারন ।

৫. সংবিধান সংশোধন ঃ
      যুক্তরাষ্ট্রীয় কেন্দ্রীয়  প্রবনতার অন্যতম কারন সংবিধান । কেননা আদি  সংবিধানের বিভাজিত ক্ষমতাকে সংশোধন করে কেন্দ্রকে অধিক ক্ষমতা প্রদান করা হচ্ছে । 
আর এভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ক্ষমতার পাহাড় হয়ে কেন্দ্রীয় করনের সৃষ্টি হয়েছে ।

                ১০ম অধ্যায়   

এক কেন্দ্রীক সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মধ্যে পার্থক্য ঃ
                   এককেন্দ্রীক সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মধ্যে পার্থক্য নি¤েœ আলোচনা করা হলো ঃ-

১ সরকারের রূপ ঃ
      এককেন্দ্রীক শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সকল প্রকার কার্য কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হয় । 
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় দু প্রকারের সরকারের অস্তিত্ব থাকে । যথা কেন্দ্রীয় সরকার ও আঞ্চলিক সরকার বা রাজ্য সরকার।
২    ক্ষমতা বন্টন :
     যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় সংবিধান অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার ও আঞ্চলিক সরকার গুলোর মধ্যে ক্ষমতা বন্টিত হয় । 
 কোন সরকারের কি কি ক্ষমতা  থাকবে তা সংবিদান অনুযায়ী নির্ধারিত হয় ।
পক্ষান্তরে সংবিধানের মাধ্যমে এককেন্দ্রীক সরকার ব্যবস্থায় জাতীয় ও স্থানীয়  সব বিষয়ই কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে । প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকার প্রদেশের সৃষ্টি করতে পারে ।


৩    সংবিধানের ধরন ঃ
        যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় সংবিধানের প্রাধান্য বজায় রাখার জন্য সংবিধান কে রিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় করে তোলা হয় । এরূপ সংবিধানকে সহজে পরিবর্তন করা যায় না  ।
অন্যদিকে এককেন্দ্রীক শাসন ব্যবস্থায় সংবিধান লিখিত বা অলিখিত হতে পারে এবং দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের তুলনায় সু পরিবর্তনীয় সংবিধানের উপর জোর দেওয়া হয়  ।

৪    সংবিধান সংশোধন ঃ  
         যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধান সাধারনত দুষ্পরিবর্তনীয় হয়ে থাকে । এক্ষেত্রে সংশোধনের জন্য বিশেষ পদ্ধতি অনুসরন করতে হয় । কিন্তু এককেন্দ্রীক ব্যবস্থায় সংবিধান সুপরিবর্তনীয় হয় । এক্ষেত্রে সাধারন আইনের ন্যায় সংবিধান পরিবর্তন করা যায় ।

৫    অনুগত্য প্রকাশ ঃ 
          এক কেন্দ্রীক শাসন ব্যবস্থায় জনগন কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি অনুগত্য প্রকাশ করে । কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় অঙ্গরাজ্য ও সরকারের প্রতি অনুগত্য প্রকাশ পায় । 
 

৬. নাগরিকতা ঃ
         এককেন্দ্রীক সরকার ব্যবস্থায় দ্বৈত নাগরিকতা থাকে না ।   অর্থাৎ সমগ্র দেশে একই নীতি অনুসরন করা হয় । 
  কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় দ্বৈত নাগরিকতার নীতি অনুসরন করা হয় ।

৭    ব্যয়ের ক্ষেত্রে ঃ
       যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিচালনা করা ব্যয় বহুল । কিন্তু এককেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা পরিচারনা করা ব্যয় বহুল নয় । এছাড়া এককেন্দ্রীক সরকার ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় আইন সভার প্রধান্য বিদ্যমান ।
 কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে আইন সভার পরিবর্তনে সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় ।


উপসংহার ঃ
   উপযুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা বর্তমান বিশে^র অধিকাংশ দেশেই একই প্রবল ঝোক সৃষ্টি করেছে । প্রায় সকল  যুক্তরাষ্ট্রেই কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা ও মর্যাদা অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পাশাপাশি রাজ্য সরকার গুলোর ক্ষমতা ও মর্যাদা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে এবং রাজ্য গুলো কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রনধীন হয়ে পড়ছে ।
 জনকল্যাণ মূলক রাষ্ট্রয়ত্ব, পরিকল্পিত অর্থব্যবস্থা আর্থিক সংকট, যুদ্ধ ও যুদ্ধের ভীতি, যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক বিস্তার প্রভৃতির কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বহুগুনে বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা জনপ্রিয়তা অর্জন করছে ।

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন