বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জনশক্তির রপ্তানির প্রভাব-পার্ট-3
- 27-Mar-2022 01:10AM
- Zahidul Islam
- 1452
ষষ্ঠ অধ্যায়
বিদেশে বাংলাদেশী মিশন গুলোর অসহযোগীতা
জনসংখ্যা রফতানি আমাদের অর্থনীতিতে অসামান্য ভূমিকা পালন করে। জনসংখ্যা সমস্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রেও জনসংখ্যা রফতানির অভাবনীয় অবদান রয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে রেমিটেন্স গুরুত্বপূর্ণ নিউক্লিয়াস হিসাবে কাজ করে। রেমিটেন্স আমাদের মোট অভ্যন্তরীণ আয় বা জিডিপির ৩০ ভাগ।
জাতীয় অর্থনীতির তাই অন্যতম চালিকাশক্তি এই রেমিটেন্স। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ রেমিটেন্স অর্জনকারী দেশ । গত চার বছর ধরে গড়ে ১৪ দশিমক ৫ শতাংশ থবৃদ্ধি হয়েছে। ২০০৮ সালের ৮৯৮? কোািট ডলার থেকে তা ২০১২ সালে ১ হাজার ৪১৭? কোটি ডলারে উন্নিত হয়েছে। ২০১৩ সালের ? রেমিটেন্স অর্জনে বেশ ভাল অগ্রগতি হয়েছে। এ পর্যন্ত ১১ দশিমক ২ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে ।
বিগত বছরটিতে প্রায় ১৩০০? কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছে। বিশ্ব মন্দা এবং স্থানীয় নানা সমস্যা সত্ত্বেও অর্থনীতির যে সেক্টর নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি তা হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। মূলত প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স প্রবাহে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশ্ব মন্দার প্রভাব তেমন একটা অনুভূত হয়নি । এ সাফল্যের মূল কৃতিত্বের দাবিদার প্রবাসী বাংলাদেশিরা। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে স্বল্প সংখ্যক খাত অসামান্য অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে তার মধ্যে জনশক্তি রফতানি সবার আগে উল্লেখযোগ্য।
এখনো বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পণ্য রফতানি খাত সবার শীর্ষে রয়েছে। তবে সার্বিক বিচারে জাতীয় অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান তথা মূল্য সংযোজনের হার তুলনামূলকভাবে কম। কারণ পণ্য রফতানি বাবদ যে অর্থ উপার্জিত হয় তার একটি বড় অংশই কাঁচামাল আমদানিতে চলে যায়।
কিন্তু জনশক্তি রফতানি খাত এমনই এক অর্থনৈতিক খাত যার উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার পুরোটাই জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন করে। একই সঙ্গে জনশক্তি রফতানি খাত দেশের ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যা নিরসনের তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছে। বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ বাংলাদেশি কর্মোপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। এরা যদি বিদেশে কর্মসংস্থান না করতে পারতো তাহলে দেশের বেকার সমস্যা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতো।
দক্ষতার প্রমান পত্রের অভাব
বিশ্ব শ্রমবাজারে আজ আমাদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত, চীন, নেপাল, ফিলিপাইন এবং শ্রীলংকা। তুলনামূলক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে সাম্প্রতিক সময়ে এসব দেশের শ্রমিকরা আমাদের দেশের তুলনায় বেশি দক্ষ, কর্মঠ এবং কাজে নিষ্ঠাবান। আর এ কারণেই জনশক্তি আমদানিকারক দেশগুলো বাংলাদেশের বদলে উল্লেখিত দেশগুলোর দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে। এ জন্যেই শ্রমবাজারে আমাদের পাল্লা দিতে হলে অবশ্যই দক্ষ শ্রমিক তৈরি ও নিয়োগে সবচেয়ে বেশি মনোযোগী হতে হবে।
জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার সঙ্গে সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন করে সরকারের শক্তিশালী ভূমিকাই জনশক্তি রফতানিখাতকে আরো গতিশীল করতে পারে।
জনসংখ্যা রফতানি কিভাবে বাড়ানো যায়, বৈদেশিক কমসংস্থান মন্ত্রণালয়কে নতুন করে ভাবতে হবে এবং যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নার্স, মেকানিঙ্ কারিগরি শিক্ষাপ্রাপ্ত ও কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনশক্তিকে কিভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশি হারে
রফতানি করা যায়, সেভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমরা যদি বিদেশে জনসংখ্যা রফতানি বৃদ্ধি করতে না পারি, তাহলে জনসংখ্যা সমস্যার বিরূপ প্রভাব পড়বে আমাদের অর্থনীতিসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে।
বিদেশী নিয়োগকারীদের হয়রানি
এ ছাড়া বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি সামান্য কয়েকটি দেশকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জনশক্তি রফতানি করা হয়। ২০০৮ সালে মোট রফতানিকৃত জনশক্তির ৪৮ শতাংশই পাঠানো হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এ ছাড়া সৌদি আরবে ১৫ শতাংশ, মালয়েশিয়ায়
১৫ শতাংশ, ওমানে ৬ শতাংশ এবং সিঙ্গাপুরে ৬ শতাংশ জনশক্তি রফতানি করা হয়। অবশিষ্ট জনশক্তি রফতানি করা হয় অন্যান্য দেশে। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে জনশক্তি রফতানি বাড়ানো গেলে এ খাতের আয় অনেকগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে
জনশক্তি রফতানির সুযোগ রয়েছে। আগামীতে বিশেষ করে মন্দা কাটিয়ে ওঠার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে লাখ লাখ ।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ২৬ মিলিয়ন দক্ষ শ্রমশক্তির প্রয়োজন হবে। পশ্চিম ইউরোপে ৪৬ মিলিয়ন দক্ষ জনশক্তির আবশ্যকতা দেখা দেবে। বর্তমান বিশ্বে মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ গ্রাজুয়েট আন্তর্জাতিকমানের চাকরি করার যোগ্যতা রাখে। ফলে আগামীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষিত জনশক্তির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। সেই চাহিদা পূরণে এখনই আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।
সপ্তম অধ্যায়
জনশক্তি রপ্তানী ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন
বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি খাতে রেমিটেন্স আয় আরো বাড়ানোর জন্য হুন্ডি প্রতিরোধ করার উদ্যোগ জোরদার করতে হবে। বর্তমানে মোট উপার্জিত রেমিটেন্সের বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও কোরিয়ার রেমিটেন্সের ২৩.৩০ শতাংশই হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আসছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রেরণ করার ক্ষেত্রে নানা ঝামেলা থাকায় প্রবাসীদের অনেকেই হুন্ডির মাধ্যমে তাদের টাকা দেশে প্রেরণ করছে।
জনশক্তি রফতানি খাতটি এখনো বলতে গেলে পুরোপুরি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এতে বিদেশ গমনকারীদের যেমন বেশি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে তেমনি নানাভাবে প্রতারিত হতে হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে বিদেশে জনশক্তি রফতানি করা গেলে এ সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব হতো।
বাংলাদেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থায় জনশক্তি রফতানি খাত ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে এক মহীরুহু। কিন্তু এ খাতের সম্ভাবনাকে এখনো পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অর্থ উপার্জন যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি সমান তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে সেই অর্থের উৎপাদনমুখী ব্যবহার এবং তা নিশ্চিত করা। পরিকল্পিতভাবে জনশক্তি রফতানি খাতের সমস্যা সমাধান এবং পেশাজীবী ও দক্ষ জনশক্তি বিদেশে প্রেরণের পাশাপাশি তাদের পাঠানো অর্থ সঠিকভাবে উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার করা গেলে এ খাত দেশের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে দিতে পারে।
জনশক্তির বাজারে চাহিদা উঠা-নামার পিছনে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণ থাকে। আমদানিকারক দেশের অর্থনীতি খারাপের দিকে গেলে দেশটির উন্নয়ন, উত্পাদন ও নির্মাণ থমকে পড়ে। জনশক্তি চাহিদা কমে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, জ্বালানি তেলের বাজারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের শ্রম বাজারেও অস্থিরতা অব্যাহত থাকবে।
চাহিদা উঠা-নামার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য সামাজিক কারণটিই সবচেয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। সমস্যাটির কয়েকটি ধারা আছে। এক. গ্রামের বেকার যুবসমাজের একটি অন্যতম আকাঙ্ক্ষা থাকে বিদেশে গিয়ে চাকরি করার। এসএসসি পাস বা ফেল করে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে তারা বেকার। নেশার মরণ ছোবল হাতের নাগালে। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদের থাবাও কম শক্তিশালী নয়।
কর্মহীন ছেলেটি খারাপ পথে চলে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা চায় ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়ে দিতে। এজন্য সহায়-সম্বল সব বিক্রি করে দিতেও কুণ্ঠিত হন না।
অষ্টম অধ্যায়
জনশক্তি রপ্তানীর কুফল
পালা। এই ব্যবসায়ীদের গ্রাম পর্যন্ত এজেন্ট থাকে। যারা শিকার যোগাড় করে দিয়ে কমিশন নেয়। এই দুষ্টচক্রটি এক সময় নারী পাচারেও যুক্ত ছিল। গ্রামের গরিব ও অবহেলিত নারীদের মোটা বেতনে চাকরি দেয়ার নামে পাচার করতো। সরকারের ব্যাপক তত্পরতার ফলে এখন সেটি প্রায় বন্ধ হয়েছে।
কিন্তু জনশক্তি রফতানির নামে প্রতারণা বন্ধ হয়নি। তাদের মাধ্যমে অনেকে বিদেশে যেতেও পারছে। এতে জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে। অবশ্য এজন্য তাদেরকে স্বাভাবিকের ৩-৪ গুণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। বিদেশে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সাথে অধিকাংশ সময়ই শ্রমিকের কোনো চুক্তি থাকে না। ফলে শ্রমিকরা বেতন অনেক কম পায়। নিম্ন পর্যায়ের কাজ করতে হয়।
এক ধরনের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। দুই. রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বিদেশে যাচ্ছে এবং সেখানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকরা ঝামেলার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে কর্তৃপক্ষ ত্যক্ত-বিরক্ত।
তারা এ সমস্যা এড়ানোর জন্য অন্যান্য দেশ থেকে জনশক্তি আমদানিকেই শ্রেয়তর মনে করছে। পাসপোর্ট জালিয়াতি তো আছেই। যদিও মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট চালু করার পর এটি প্রায় বন্ধ হয়েছে। তিন. রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানিকারক কোম্পানিগুলোর সাথে যোগসাজশে চাহিদার তুলনায় বেশি লোক নেয়া, ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই লোক পাঠানো, ভুয়া কোম্পানির চাহিদাপত্রের মাধ্যমে জনশক্তি রফতানি
করে। এতে প্রশাসনেরও প্রশ্রয় থাকে। মালয়েশিয়ার বাজারটি হাতছাড়া হওয়ার পিছনে এ প্রতারণাই প্রধান কারণ ছিল। প্রবাসীদের কেউ কেউ সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি তো আছেই।
বিশ্বে শ্রমিকের চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ষষ্ঠ শীর্ষ জনশক্তি রফতানিকারক দেশ। এ অবস্থান আরো উন্নত করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে। তবে এ জনশক্তি রফতানি প্রবৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বিশ্বে দ্রত প্রযুক্তি ও যান্ত্রিক বিকাশ ঘটছে।
উন্নত বিশ্ব এবং চীনসহ অনেক উদীয়মান অর্থনীতিতেই শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। তাই তারা জনশক্তির বিকল্প হিসেবে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারকে প্রাধান্য দিচ্ছে। অদক্ষ বা স্বল্পদক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন এক সময় ফুরিয়ে যাবে। বর্তমানে প্রবাসে কর্মরতদের প্রায় ৩৪ শতাংশ দক্ষ ও পেশাজীবী। প্রায় ৫২ শতাংশই অদক্ষ শ্রমিক। ভয় এ বড় অংশকে নিয়ে। বাংলাদেশের জনশক্তিকে দক্ষ করে তুলতে না পারলে এক সময় দেশ বৈদেশিক শ্রমবাজার হারাবে। নিম্ন উত্পাদনশীল শ্রমশক্তিকে সময়োপযোগী শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও ইন্টার্নশিপ করিয়ে উচ্চ উত্পাদনশীল জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে। এজন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। ব্যাপক বিনিয়োগ করতে হবে।
দারিদ্র্যের কারণে কর্মশক্তি হরাস পায়। তাই দারিদ্র্য ঘুচানোর পদক্ষেপগুলো লাখ ৮১ হাজার ৪৪৪ জন বা ৩৩ শতাংশ। অন্যদিকে আধা দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১ লাখ ৩২ হাজার ৮১০ জন বা ১৫ শতাংশ এবং ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭ জন বা ৫২ শতাংশ। বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০টি জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে একটি। কিন্তু রেমিটেন্স আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে।
এর কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে পেশাজীবী জনশক্তি রপ্তানির হার খুবই কম। অথচ ২০ জন সাধারণ শ্রমিক বিদেশে গিয়ে যে অর্থ আয় করে একজন পেশাজীবী একাই সেই পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারে। তাই পেশাজীবী জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানো না গেলে জনশক্তি খাতের আয় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়বে না।
কিন্তু বাংলাদেশ থেকে পেশাজীবী জনশক্তি রপ্তানির হার ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
নবম অধ্যায়
বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির বর্তমান অবস্থা
সৌদি আরবে ১৫ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ১৫ শতাংশ, ওমানে ৬ শতাংশ এবং সিঙ্গাপুরে ৬ শতাংশ জনশক্তি রপ্তানি করা হয়। অবশিষ্ট জনশক্তি রপ্তানি করা হয় অন্যান্য দেশে। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানো গেলে এ খাতের আয় অনেকগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্ত রপ্তানির দিক থেকে ২০১৩ সাল একটু পিছিয়ে আছে। ২০১২ সালে প্রায় ৬ লাখ ৮ হাজার জনশক্তি বিভিন্ন দেশে গেছে। পক্ষান্তরে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে প্রায় ২ লাখ ৭৪ হাজার জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানির দিক থেকে এ বছর শীর্ষে আছে ওমান। তারপর সিঙ্গাপুর, কাতার, বাহরাইন, সৌদি আরব ও লেবানন।
তবে নারী জনশক্তির বিদেশ গমন প্রতিবছরই বাড়ছে। ২০১৩ সালে এ বৃদ্ধির হার বেড়েছে। ২০১২ সালে ৩৭ হাজার ৩০৪ জন নারী বিদেশে গেছেন চাকুরি নিয়ে। পক্ষান্তরে ২০১৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৩৬ হাজার ২৪৬ জন নারী বিদেশে গেছেন। বাঙালি নারীর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে জর্দান। তারপর সংযুক্ত আরব আমীরাত, লেবানন ও ওমান।
জনশক্তি রপ্তানি হ্রাসের অন্যতম কারণ হচ্ছে বিশ্ববাজারে অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা কমে গেছে। অথচ বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানির বড় অংশটাই অদক্ষ বা স্বল্পদক্ষ শ্রমিক। ২০১২ সালে ৬২ শতাংশ জনশক্তিই ছিল স্বল্পদক্ষ।
৩৪ শতাংশ ছিল দক্ষ। অবশিষ্ট পেশাজীবী ও আধা দক্ষ। এক সময় জনশক্তি রপ্তানির ৯৫ শতাংশই হতো অদক্ষ শ্রমিক। আধুনিক প্রযুক্তি ও যান্ত্রিক ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এখন অদক্ষ বা স্বল্পদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা প্রতি বছরই নেশার মরণ ছোবল হাতের নাগালে।
সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদের থাবাও কম শক্তিশালী নয়। কর্মহীন ছেলেটি খারাপ পথে চলে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা চায় ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়ে দিতে। এজন্য সহায়-সম্বল সব বিক্রি করে দিতেও কুণ্ঠিত হন না। তাদের এই দুর্বলতার সুযোগটিই নেয় একশ্রেণির জনশক্তি ব্যবসায়ী, যারা আদম ব্যবসায়ী হিসেবে সমধিক পরিচিত।
স্বচ্ছ ব্যবসা নয়, ছয়-নয় করে টাকা উপার্জনই তাদের মূল লক্ষ্য থাকে। তাই তারা বেকার যুবক ও তাদের অভিভাবকদের প্রলোভন দেখিয়ে দেশভেদে দুই-তিন লাখ টাকা নেয়।
দশম অধ্যায়
জনসংখ্যা রপ্তানি বৃদ্ধিতে আমার সুপারিশঃ
দেশের জনসংখ্যা রপ্তানিতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে আমার মতে নি¤েœাক্ত সুপারিশ রয়েছে ।নি¤েœ তার অবস্থান বর্ণনা করা হলো ঃ-
১. উপযুক্ত সরকারী নীতি ঃ-১৯৮২ সালের আইন সংস্কার করে নতুন অভিবাসী আইন তৈরী করতে হবে । এছাড়া তাদের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন দেশের জন্য চুক্তি করা যেতে পারে ।
২. মনিটরিং ব্যবস্থা জোড়দার করা:- দেশে এবং বিদেশে রিক্রটিং এজেন্সিগুলো প্রতি বিশেষ নজরদাড়ি বাড়াতে হবে ।
৩.যোগ্য ব্যাক্তিদের সার্টিফিকেট প্রদানঃ- যেসব শ্রমিক যে সকল ক্ষেত্রে দক্ষ তাদের সেই বিষয়ে সনদ প্রদান করতে হবে ।
৪. উপযুক্ত প্রশিক্ষন ও দক্ষতার জন্য কর্মসূচি প্রদান করতে হবে । কারণ উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করা সম্ভব নয় ।
৫.দেশত্যাগ পূর্বক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে । কারন বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম আইন থাকে ।
৬. প্রতিযোগীতামূলক শ্রম বাজারে টিকে থাকতে হলে দক্ষতা বৃদ্ধি ছাড়া আর অন্য কোন উপায় নাই । তাই শ্রমিকদের দক্ষতা অর্জনে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে উদ্দোগ নিতে হবে ।
৭.পুনর্বাসনঃÑ দেশে ফেরত শ্রমিকদের জন্য দ্রুত পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে ।
৮. বিদেশ ফেরত শ্রমিকদের মাঝে নেটওয়াক তৈরী করতে হবে ।
৯. আমানত ও বিনিয়োগ ¯িকম ঘোষণা করা যেতে পারে ।
১০. প্রতিটি দেশে বাংলাদেশী দূতাবাসের বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে ।
১১. শ্রমিকদের আইনগত বৈধতা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে ।
১২. শ্রমিকদের উপার্জিত অর্থ সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে হবে ।
১৩. নতুন নতুন শ্রম বাজার বের করার জন্য সরকারের বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে ।
উপসংহার
বেকাত্ব বাংলাদেশের অর্থনীতি জন্য একটি বড় ধরনের সমস্যা । এই জন্য বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রূপ্তানি করে দেশের অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশ উন্নতি লাভ করে আসছে।
বাংলাদেশ থেকে বিদেশগ্রামী দারিদ্র্যর ৯৫% গ্রামের মানুষ । তাই গ্রামীণ লোকদের জনশক্তি রুপ্তানি দেশের বেকাত্ব হার কমছে। তাই জনশক্তি রপ্তানি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আপাতদৃষ্টিতে লাভজনক হলেও এতে আর্থ
সামাজিক অঙ্গনে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়। বিশেষ করে উচ্চ আয়ের লোক এবং অধিক সুযোগ সুবিধা লাভের আশায় প্রতিবছর দেশ থেকে যেসব মেধাবী জনশক্তি বেরিয়ে যায় দেশ তাদের সেবা থেকে একেবারে বঞ্চিত হচ্ছে । সুতরাং বলা যায় , বাংলাদেশ থেকে বহির্বিশ^ জনশিক্ত রপ্তানি করার ফলে আর্থ সামাজিক অঙ্গনে একি মিশ্র ফলাফল সৃষ্টি হয়েছে।
পরিশেষে বলতে পারি গণতান্ত্রিক রাজনীতি অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সাংস্কৃতি অগ্রগতির পথে ধাবমান বাংলাদেশকে এ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা প্রস্তুত করতে হবে এর ১৫ কোটি মানবসন্তানকে মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে এবং মানবসম্পদই মানব পুঁজিতে রুপান্তরিত হয়ে বিশ^ অর্থনীতিতে সুদৃঢ় অবস্থান গড়ে তোলা ।
গ্রন্থপঞ্জি
১. ড. অনদিকুমার মহাপাত্র - রাষ্ট্রবিজ্ঞান
২. ড. এমাজউদ্দিন আহমদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কথা
৩. সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান
৪. সৈয়দ মকসুদ আলী রাষ্ট্রীয় সংগঠনের রূপরেখা
৫. ড. মোঃ মকসুদুর রহমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মৌলনীতি
৬. প্রফেসর ইয়াসমিন আহমেদ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি