দারিদ্র্য বিমোচনের কৌশল
- 27-Mar-2022 08:41AM
- Zahidul Islam
- 1266
ভূমিকাঃ- দারিদ্র্য মানুষের জীবনে একটি অভিশাপ । দারিদ্র্যের অসহনীয় জ¦ালা মানুষকে করে দেয় পঙ্গু, হতাশাগ্রস্ত ও স্বপ্ন বিমুখ এক ব্যর্থ পুরুষে । দারিদ্র্যদের জন্য মানুষের স্বাভাবিক সহজ সুন্দর জীবন পথের অনাবিল ¯্রােতধারা স্তব্ধ হয়ে যায় ।
তাই ১৯৫৮ সালে গলব্রেথ ইউরোপ ও আমেরিকা প্রাচুর্যময় সমাজের মধ্যে দারিদ্র্যর অভিশাপের কথা আলোচনা করেন । নির্মম দারিদ্র্য নিষ্পেষিত মানুষের উপস্থিতিতে কোন প্রাচুর্য যে সত্যিকারের প্রাচুর্য নয় তা তিনি তুলে ধরেন ।
এরপর থেকে উন্নয়ন অর্থনীতিতে দারিদ্র্য বিমোচনের কথা আলোচিত হয়ে থাকে । ক্রমেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সংজ্ঞার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় ।
দারিদ্র্য মানুষের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে দেয় না । দারিদ্র্য অনেক সময় মানুষকে মূত্যুর মুখোমুখি এনে দাঁড় করায় এবং একটা জাতিকে ধ্বংশ করার ক্ষেত্রে তথা বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত করতে একটা চরম অভিশাপ তথা আল্লাহ তায়ালার গজব হিসেবে কাজ করে ।
দারিদ্র্যঃ-
দারিদ্র্য একটি বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক সমস্যা । দারিদ্র্য বলতে মানুষের মৌলিক প্রয়োজন মেটানো এবং একটি সম্মান জনক জীবন যাপন করার অপারগতা বুঝায় । পর্যাপ্ত খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান এবং কর্ম সংস্থান করতে না পারা, নিরাময় যোগ্য ব্যাধি ও অকাল মূত্যু থেকে নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে না পারা এবং সামাজিক জীবনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্মানজনক জীবন যাপনে অপরাগতা সহ বিভিন্ন মৌলিক প্রয়োজন পূরণের অক্ষমতাকে দারিদ্র্য বলা হয় । বাংলাদেশের পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দারিদ্র্যের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে “ইৎড়ধফষু ংঢ়বধশরহম, ঢ়ড়াবৎঃু ৎবভবৎং ঃড় ভড়ৎসং ড়ভ বপড়হড়সরপ ংড়পরধষ ধহফ ঢ়ংুপযড়ষড়মরপধষ ফবঢ়ৎাধঃরড়হ ড়পপঁৎৎরহম ধসড়হম ঢ়বড়ঢ়ষব ষধপরহম ংঁভভরপরবহঃ ড়হিবৎংযরঢ় পড়হঃৎড়ষ ড়ৎ ধপপবংং ঃড় ৎবংড়ঁৎপবং ভড়ৎ সরহরসঁস ৎবয়ঁরৎবফ ষবাবষং ড়ভ ষরারহম” অতএব দারিদ্র্য হচ্ছে একটি বহুমাত্রিক অর্থনীতি সমস্যা যার মাধ্যমে আয়, ভোগ, পুষ্টি, স্বাস্থ্য,শিক্ষা, বাসস্থান, বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে মানুষের অপারগতাকে বুঝায় । তবে প্রয়োজনীয় আয়ের অভাব ছাড়া অন্যান্য অপারগতা পরিমাপ করা কঠিন বিধায় একটি নূন্যতম স্তরের আয় উপার্জনের অক্ষমতাকে সাধারণঃত দারিদ্র্য বলে সনাক্ত করা হয় ।
বাংলাদেশের দারিদ্র্যের মাত্রাঃ-
বর্তমান বিশে^ দারিদ্র্যতম দেশ গুলোর মধ্যে দূর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশ একটি । এখানে অনাপেক্ষ দারিদ্র্য এতই প্রকট যে জনগনের চেহারা, পরিচ্ছদ, বাসস্থান ইত্যাদি দেখেই বুঝা যায় যে তারা নিদারুন দারিদ্র্য কলাতিপাত রয়েছে । পরিসংখ্যান এর দিকে তাকালে দেখা যায় যে, এদেশের জনসংখ্যার এক বৃহদাংশের অবস্থান দারিদ্র্য সীমার নিচে । বাংলাদেশের ৫২.৮৫% মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত, ৬৩.৩৫% মানুষ সেনিটেশন বঞ্চিত এবং শিশুদের ও ২৬% শতাংশ প্রাথমিক স্কুলে যায় না । টঘউচ- এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪০% অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি মানুষ প্রতিদিন ২১২২ কিলো ক্যলোরির কম খাদ্য গ্রহণ করে । তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষ পল্লী অঞ্চলের ভূমিহীন । কৃষকদের প্রতিজনের দুটি জামা নাই, শতকরা ৪০ জনের বেশি লোকের শীতবস্ত্র নাই ।
জুতা নেই ৪৪% এবং ৯৬% লোকের নিজস্ব ঘড় নেই ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৫৮-৮৬ সালে পল্লী অঞ্চলে ৬ মাস থেকে ৬ বছর বয়সে শিশুরাও ৯.৬% তীব্র অপুষ্টিতে ভূগেছিল । ৫২.০% মাঝারী ও ৩৩.২% মূদ্যু অপুষ্টিতে ভুগেছিল এবং ৫.২% স্বাভাবিক ছিল ।
পাশর্^বর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশেও দারিদ্র পরিস্থিতি খারাপ । বিশ^ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী দারিদ্র জনসংখ্যার অনুপাত ছিল বাংলাদেশ ৪৩% পাকিস্তানে ২৩% ভারতে ৩৫% ও শ্রীলংকার ২৭% আপেক্ষিক দারিদ্র এর মাত্রা অনুধাবন করার উদ্দেশ্যে আমরা বিশ^ ব্যাংকের “ ড়িৎষফ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ৎবঢ়ড়ৎঃ ১৯৯৬” এর ধারা উল্লেখ করতে পারি ।
ঐ সূচকে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশের দারিদ্র্যতার সূচক মান ২৮৩ । ভারত, পাকিন্তান, শ্রীলঙ্কার দারিদ্র সূচক যথাক্রমে ৩৩.৮, ৩১.২ এবং ৩০.১ । অবশ্য এটি ১৯৯২ সালের তথ্য ভিত্তিক ।
বাংলাদেশের দারিদ্র্যের স্বরূপঃ
বাংলাদেশ তৃতীয় বিশে^র একটি অনুন্নত দেশ । দারিদ্র্য এর প্রতিটি ক্ষেত্র । কোন বিষয়েই এর উন্নয়ন আশা ব্যঞ্জক নয় । দেশের শিক্ষা সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান, জীবন যাত্রার মান প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রেই পশ্চাৎপদ ।
বাংলার সিংহভাগ মানুষ দুবেলা পেট পুরে খেেেত পারে না । দেশের অধিকাংশ মানুষের বসবাস দারিদ্র্য সীমার নিচে । পোশাক পরিচ্ছদ, শিক্ষা দীক্ষা কোনটিও বিধিমত নেই । জীবনের অধিকাংশ দিন কাটে অতি পরিশ্রম করে । অর্জন থেকে যায় শূন্যের কোঠায় ।
দারিদ্র্যতার বিচারে বিশে^র অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের স্থান যে কোথায় তার হিসাব করতে যাওয়াটাও বোকামী ।