বাংলাদেশের দারিদ্র বিমোচনে গ্রামীন ব্যাংক

  প্রথম অধ্যায়
ভূমিকা
বাংলাদেশের ৩১.৫% লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে থাকে। গ্রামীণ ব্যাংক এ দারিদ্র্য বিমোচনের  ক্ষেত্রে গুরুপূর্ণ ভূমিকা পালন থাকে। গ্রামীণ দরিদ্র, বঞ্চিত, উন্নয়ন কর্মকান্ড বািহর্ভূত জনগোষ্ঠীকে রক্ষা ভূক্ত দল হিসেবে চিহ্নিত করে শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও ঋণসহ প্রয়োজনীয় সাহায্য 

সহযোহিতার নিশ্চয়তা প্রদান করে থাকে। যার দ্বারা দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের জীবন যাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়ন করতে পারে, যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করে থাকে। বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীন ব্যাংকের ভূমিকা অপরিসীম ।

      দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। কিন্তু ‘দারিদ্র্য বিমোচন’ প্রত্যয়টি প্রতিদিনই বহুবার শোনা যায়। এটি যতবার শোনা যায় সরকারের পক্ষ থেকে ঠিক ততবারই শোনা যায় ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক আলোচনা প্রসঙ্গে। বাংলাদেশে ৭০ এর দশকে ক্ষুদ্রঋণ এর পথচলা শুরু। 
গ্রামীন ব্যাংকঃ
   গ্রামীন অঞ্চলের দারিদ্র ও ভূমিহীন মহিলাদের গ্রুপভিত্তিক  ঋণ ভিত্তিক প্রদানের কর্মসূচি  নিয়ে ১৯৮৩ সালে গ্রামীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় । গ্রামীন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হলেন নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস । তিনি শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন । উল্ল্যেখ বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল তিনিই পেয়েছেন । 

অপরাপর ব্যাংকের তুলনায় এর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ঠ্য এই যে কোন জামানত বিহীন এই ব্যাংক ঋণ দেয় । বর্তমানে বাংলাদেশের অর্ধেকেরও বেশি গ্রামে গ্রামীন ব্যাংকের শাখা রয়েছে ।  বর্তমানে তাদের মোট শাখা ১১৯৫টি ।

 মোট ৬১টি জেলাতে ও৩৯৩ উপজেলাতে তাদের মোট ৩১.২৪ লক্ষ সদস্য রয়েছে ।  এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে দেশ ছাড়াও সার্কভূক্ত বিভিন্ন দেশে গ্রামীন ব্যাংকের শাখা খোলা হয়েছে । 

 গ্রামীন ব্যাংকের সূচনা চট্রগ্রামে হলেও এর প্রধান অফিস বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ।  বর্তমানে ক্ষুদ্র ঋণ আন্দোলনের লক্ষ্য হচ্ছে ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ এ দুনিয়ায় সবচেয়ে গরীব সাড়ে ১৭ কোটি পরিবারের, বিশেষ করে, এসব পরিবারের নারীদের কাছে ক্ষুদ্রঋণ পৌঁছে দেয়া নিশ্চিত করতে কাজ করে যাওয়া। 

 দ্বিতীয় অধ্যায়


দারিদ্র্যঃ- 


 দারিদ্র্য একটি বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক সমস্যা ।  দারিদ্র্য বলতে মানুষের মৌলিক প্রয়োজন মেটানো  এবং একটি সম্মান জনক জীবন যাপন করার অপারগতা বুঝায় । 

পর্যাপ্ত খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান এবং কর্ম সংস্থান করতে না পারা, নিরাময় যোগ্য ব্যাধি ও অকাল মূত্যু থেকে নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে না পারা

 এবং সামাজিক জীবনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্মানজনক জীবন যাপনে অপরাগতা সহ বিভিন্ন মৌলিক প্রয়োজন পূরণের অক্ষমতাকে  দারিদ্র্য বলা হয় ।

 বাংলাদেশের পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দারিদ্র্যের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে “ÒBroadly speaking, poverty refers to forms of economic social and psychological deprvation occurring among people lacing sufficient ownership control or access to resources  for minimum required levels of living”  অতএব দারিদ্র্য হচ্ছে একটি বহুমাত্রিক অর্থনীতি সমস্যা যার মাধ্যমে আয়, ভোগ, পুষ্টি, স্বাস্থ্য,শিক্ষা, বাসস্থান, 

বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে মানুষের অপারগতাকে বুঝায় । 

তবে প্রয়োজনীয় আয়ের অভাব ছাড়া অন্যান্য অপারগতা পরিমাপ করা কঠিন বিধায় একটি নূন্যতম স্তরের আয় উপার্জনের অক্ষমতাকে সাধারণঃত দারিদ্র্য বলে সনাক্ত করা হয় ।    

    তৃতীয় অধ্যায়                


বাংলাদেশের  দারিদ্র্যের  মাত্রাঃ-
 বর্তমান বিশে^ দারিদ্র্যতম দেশ গুলোর মধ্যে দূর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশ একটি । এখানে অনাপেক্ষ দারিদ্র্য এতই প্রকট যে জনগনের চেহারা, পরিচ্ছদ, বাসস্থান ইত্যাদি দেখেই বুঝা যায় যে তারা নিদারুন দারিদ্র্য কলাতিপাত রয়েছে । পরিসংখ্যান এর দিকে তাকালে দেখা যায় যে, এদেশের জনসংখ্যার এক বৃহদাংশের অবস্থান দারিদ্র্য সীমার নিচে ।


 বাংলাদেশের ৫২.৮৫% মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত, ৬৩.৩৫% মানুষ  সেনিটেশন বঞ্চিত এবং শিশুদের ও ২৬% শতাংশ প্রাথমিক স্কুলে যায় না । টঘউচ- এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪০%  অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি মানুষ  প্রতিদিন ২১২২ কিলো ক্যলোরির কম খাদ্য গ্রহণ করে ।

 তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষ পল্লী অঞ্চলের ভূমিহীন । 
কৃষকদের  প্রতিজনের দুটি জামা নাই, শতকরা ৪০ জনের বেশি লোকের শীতবস্ত্র নাই ।
জুতা নেই ৪৪%  এবং ৯৬% লোকের নিজস্ব ঘড়  নেই ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৫৮-৮৬ সালে পল্লী অঞ্চলে ৬ মাস থেকে ৬ বছর বয়সে শিশুরাও ৯.৬% তীব্র অপুষ্টিতে ভূগেছিল । ৫২.০% মাঝারী ও ৩৩.২% মূদ্যু অপুষ্টিতে ভুগেছিল এবং ৫.২% স্বাভাবিক ছিল ।


পাশর্^বর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশেও দারিদ্র পরিস্থিতি খারাপ । বিশ^ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী দারিদ্র জনসংখ্যার অনুপাত ছিল বাংলাদেশ ৪৩% পাকিস্তানে ২৩% ভারতে ৩৫% ও শ্রীলংকার ২৭% আপেক্ষিক দারিদ্র এর মাত্রা অনুধাবন করার উদ্দেশ্যে আমরা বিশ^ ব্যাংকের “ ড়িৎষফ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ৎবঢ়ড়ৎঃ ১৯৯৬” এর ধারা উল্লেখ করতে পারি । 


ঐ সূচকে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশের দারিদ্র্যতার সূচক মান ২৮৩ । ভারত, পাকিন্তান, শ্রীলঙ্কার দারিদ্র সূচক যথাক্রমে ৩৩.৮, ৩১.২ এবং ৩০.১  । অবশ্য এটি ১৯৯২ সালের তথ্য ভিত্তিক ।


                
দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ:
           দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বিগত প্রায় চার দশক ধরে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন- গ্রামীণ ব্যাংক, আশা, ব্র্যাক, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, প্রশিকা ও আরো কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী দুই কোটিরও বেশি মানুষ এখন ক্ষুদ্রঋণের সঙ্গে যুক্ত, যাঁদের মধ্যে দেড় কোটি গ্রহীতা এখনো সক্রিয় আছেন।

 একই সূত্রে অন্য আরেক হিসাবে বলা হয়েছে, একই ব্যক্তি একাধিক সংস্থার কাছ থেকে ক্ষুদ্রঋণ নেন শতকরা ৩৩ ভাগ। এই বিবেচনায় মোট ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতার সংখ্যা এক কোটি। তবে মোট ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের শতকরা ৭০.৩৬ ভাগ এবং সক্রিয় ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের শতকরা ৮৫.৬৬ ভাগ মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠানে 
কেন্দ্রীভূত।
 এগুলো হলো গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশা এবং প্রশিকা। গত বছর মোট ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকাই বিতরণ হয়েছে গ্রামীণব্যাংক, ব্র্যাক ও আশার মাধ্যমে। 


গ্রামীণ ব্যাংকের ওয়েব সাইটে হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে ৮৩ হাজার ৩৪৩টি গ্রামে। মোট কর্মী সংখ্যা ২৪ হাজার ৩২৫ জন। শুরু থেকে এ পর্যন্ত গ্রামীণব্যাংক ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করেছে মোট ৪০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। 


টার্গেট গ্রুপ তথা বিত্তহীন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, ভূমিহীন কৃষি শ্রমিক, গ্রামীণগরীব মহিলা ও বেকার যুবকের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ও শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে তাদের আত্মসচেতনতাবোধ জাগিয়ে তোলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা দানের মাধ্যমে তাদের আত্মকর্মসংস্থানে

 নিয়মিত করে আয় বৃদ্ধি করাই এর মূল লক্ষ্য।  

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন