অর্থনৈতিক উন্নয়নে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত পার্ট-১
- 15-Apr-2022 01:17AM
- Zahidul Islam
- 1325
বাংলাদেশের আকাশপথঃ
আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার অন্যতম ও দ্রুত যাতায়াতের ও পরিবহনের মাধ্যম হলো আকাশ পথ । বাংলাদেশে আকাশ পথের পরিবহন ব্যবস্থার নাম জাতীয় পতাকাবাহী ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স লিমিটেড’ । এটি ৩টি অভ্যন্তরীণ ও ১৯ টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে সার্ভিস পরিচালনা করছে । এর মধ্যে সার্কভুক্ত দেশে ৪ টি, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ৪ টি মধ্যপ্রাচ্যে ৯ টি এবং ইউরোপে ২ টি গন্তব্যে সার্ভিস পরিচালনা করছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বহরে মোট ১১টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ৪ টি ডিসি ১০-১৩ তিনটি ৩১০-৩০০,২টি ৭৩৭-৮০০ আর , ৪টি ৭৮৭-৮০, ২টি ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশের আকাশ সীমায় চলাচলকারী দেশি বিমানের সময়ানুগ,ত্বরিৎ ও নিরাপদ চলাচলের নিশ্চয়তার জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে। এই কর্তৃপক্ষ ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ( ঢাকা, সিলেট, ও চট্টগ্রাম) ও ৭টি অভ্যন্তরীণ (যশোর,বরিশাল,ঈশ্বরদী,রাজশাহী,সৈয়দপুর,কক্সবাজার,কুমিল্লা) পরিচালনা করছে । দুঃখের বিষয় হলো ১৪টি বিমান বন্দরের মধ্যে ১৩ টি ভর্তুকি দিয়ে চালাতে হয় ।
বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ
যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে, যেসব মাধ্যমের সাহায্যে দেশের ও দেশের বাইরে যোগাযোগ রক্ষা করা যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বলে ।যোগাযোগের মাধ্যম গুলোর অগ্রগতি ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা সম্ভব নয় । কিন্তু বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবন্থা তেমন উন্নত নয় ।
বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম গুলো নি¤েœ উল্লেখ করা হলোঃ
১. ডাক বিভাগ ।
২. টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন ।
৩. বেতার ।
৪. টেলিভিশন ।
৫. ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র ।
৬. ফ্যাক্স ।
৭. ইন্টারনেট ।
ডাক বিভাগের সাহায্যে চিঠি পত্র আদান করা হয় । টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন এর সাহায্যে কথার সাহায্যে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকি । বেতারের সহায্যে বিভিন্ন সংবাদ পেয়ে থাকি । টেলিভিশনের কথা ও ছবি দেখতে পাই । ভূ - উপগ্রহ ও ইন্টারনেটের সাহায্যে আমরা সমস্ত বিশ্ব হাতের মুঠোয় দেখতে পারি ।
বাংলাদেশের ডাক বিভাগঃ
যোগাযোগের ক্ষেত্রে ডাক বিভাগ একটি অতি প্রাচীন মাধ্যম । দেশের ব্যবসায় বাণিজ্যের উন্নতি ও জনগনের স্বল্পব্যয়ে যোগাযোগের মাধ্যম তথা দেশের সঠিক উন্নয়নের ডাক বিভাগ গুরুত্বপূণ ভূমিকা পালন করে । দেশে বিদেশে চিঠিপত্র আদান প্রদান ছাড়াও মটরযান,কর, স্ট্যাম্প বিক্রয়, বিভিন্ন ফিস আদায় সহ দেশের সার্বিক সঞœয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডাক জীবন বীমা , ডাক সেভিং ব্যাংকসহ প্রভৃতি ব্যবস্থসমূহ প্ররিচালনা করে ।
বর্তমানে বাংলাদেশের মোট ডাক ঘরের সংখ্যা ৯৮৮৬ । ৪৮টি দেশের সাথে দ্রুততম এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিস (ঊগঝ) ২২টি দেশের সাথে মানি অর্ডার সার্ভিস,২৮টি দেশের সাথে ইনটেল পোস্ট বা ফ্যাক্স সার্ভিস চালু আছে। এছাড়া দ্রুত ও নিরাপদ ডাক বিতরণের জন্য দেশের অভ্যন্তরে এ.ঊ.চ (এঁৎৎধহঃবফ ঊীঢ়ৎবংং চড়ংঃ) আন্তর্জাতিকভাবে ওগঝ(ওহঃবৎহধঃরড়হধষ গধরষ ঝবৎারপব)চালু
আছে।
[উৎস:বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১১]
টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন:
বর্তমান তথ্যপ্রবাহের যুগে দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে দ্রুত খবর আদান- প্রদান এবং বাণিজ্যিক যোগসূত্র স্থাপনে টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।বর্তমানে দেশে ৯৫৮ টি টেলিগ্রাফ অফিস আছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক, কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় টেলিগ্রাফ ও অফিসের সংখ্যা ১৫ টি,টেলিগ্রাফ ও ক্ষুদ্র টেলিগ্রাফ অফিস ২৯৫ টি ৩০২ টি খুব উচু তরঙ্গ (ঠবৎু ঐরময ঋৎবয়ঁবহপু,ঠঐঋ) পাবলিক কল অফিস(চঈঙ)উল্লেখযোগ্য।বর্তমানে ল্যান্ড ফোনের সংযোগ সংখ্যা প্রায় ১২ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে।টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এর মধ্যে। কার্ডফোন, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট,সাবমেরিন কেবল স্থাপন ইত্যাদি রয়েছে।বর্তমানে কার্ডফোনের সংখ্যা প্রায় ১৫১৯টি,মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। দেশের অভ্যন্তরেও বিশ্বের যে কোন দেশে সরাসরি কথা বলার জন্য যথাক্রমে ন্যাশন ওয়াইড ডায়ালিং (ঘডউ) ও ইন্টারন্যাশনাল সাবস্ক্রাইবার ডায়ালিং(ওঝউ)চালু রয়েছে ।
২৫ টি দেশের সাথে ০১২ ইকোনমি (ওঝউ) কল সার্ভিস চালু রয়েছে । এছাড়া ঝঊঅ-গঊ-ডঊ-৪ নামক কনসোর্টিয়ামের সহায়তায় সাবমেরিন কেবল স্থাপনের মাধ্যমে প্রযুক্তির সুপার হাইওয়েতে প্রবেশ করেছে । এছাড়া এই খাতকে আরও যুগোপযোগী করার জন্য বি টি সি এল , এবং বি টি আর সি গঠন করা হয়েছে ।
বাংলাদেশের বেতারঃ
বাংলাদেশে জনসচেতনতা ও যোগাযোগের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হলো বেতার । সংবাদ প্রচার সহ সকল শ্রেণীর মানুষের শিক্ষা,বিনোদন সহ যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করার ক্ষেত্রে দেশ বিদেশের মানুষের সাথে যোগাযোগস্থাপন করে থাকে । ১৯৪৭ সালে প্রথম ঢাকায় বেতার কেন্দ্র চালু করা হয় । মোট কেন্দ্র ট্রান্সমিটারের সংখ্যা ১৪ টি ।
ঢাকা সহ চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খূলনা, ঠাকুরগাও,কুমিল্লা,রাঙামাটি,রংপুর প্রভৃতি স্থানে বেতার কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে । বর্তমানে এফ্ এম রেডিও খুবই জনপ্রিয় ।
বাংলাদেশের টেলিভিশনঃ
বর্তমান যুগের সবচাইতে জনপ্রিয় গনযোগাযোগের মাধ্যম হলো টেলিভিশন । ১৯৬৪ সালে ঢাকায় উওঞ ভবনে স্থাপিত টেলিভিশন কেন্দ্র ১৯৭৫ সালে টিভির নিজস্ব ভবন রামপুরায় স্থাপিত হয় । ১৯৮০ সালে টিভিতে রঙিন চিত্র প্রদর্শন শুরু হয় । বর্তমানে চিত্র বিনোদনের প্রধান মাধ্যম হলো টেলিভিশন । বাংলাদেশে সরকারী ও বেসরকারি টেলিভিশন সেন্টার রয়েছে । সংবাদ, ছবি, সহ বিভিন্ন ভাবে এটি মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষায় কাজ করে থাকে । বিটিভি, এনটিভি, এটিএন, আরটিভি ইত্যাদি সমস্ত চ্যানেলে ২৪ ঘন্টা সম্প্রচার করে থাকে ।
ভূ-উপগ্রহঃ
বর্তমান তথ্য বিপ্লবের যুগে বহির্বিশ্বের সংগে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভূ-উপগ্রহ
অন্যতম ভূমিকা পালন করে । পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বেতার,টেলিভিশন, টেলিযোগযোগ সবই ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে হয়ে থাকে । যা মহাশূন্যে প্রেরিত কৃত্রিম উপগ্রহ কর্তৃক বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে পরিচলিত হয় ।বাংলাদেশে মোট চারটি উপগ্রহ স্থাপিত হয়েছে ।
টেলেক্সঃ
টেলেক্স সার্ভিস সাধারনত টেলিপ্রিন্টার এক্সেচেঞ্জের মাধ্যমে স্থাপিত হয়ে থাকে । বর্তমানে বাংলাদেশের ঢাকা,খুলনা, ও চট্টগ্রামে স¦য়ংক্রিয় টেলেক্স এক্সেচেঞ্জ রয়েছে যা দ্রুত যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ।
ফ্যাক্সঃ
আধুনিক যোগাযোগ ব্যাবস্থায় এটি এক গুরুত্ব পূর্ণ সংযোজন যার দ্বারা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মূহুর্তের মধ্যে ছবি,ডকুমেন্ট ও ইমেজ ইত্যাদি প্রেরণ করা যায় । তবে আজকাল এর ব্যবহার তেমন পরিলক্ষিত হয় না । সরকারি তথ্য আদান প্রদানে এর ব্যবহার লক্ষ্যনীয় ।
বাংলাদেশের ইন্টারনেটঃ
কম্পিউটারে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (ডঅঘ) কেন্দ্রিক সর্বাধিক যোগাযোগ ব্যাবস্থায় ইন্টারনেট উল্লেখযোগ্য সংযোজন । এর সাহায্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সংবাদ আদান -প্রদান সহজতর ও সুলভ হয়েছে ।
বাংলাদেশের কক্সবাজারের ঝিলংজায় সাবমেরিন কেবলের ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড সার্ভিস যথা কল সেন্টার, ভিডিও কনফারেন্সিং, টেলিমেডিসিন, সফটওয়্যার রপ্তানি ইত্যাদি স্বল্প মূল্যে ও সহজে চালু করা সম্ভব হচ্ছে ।
২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নানা মুখী পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে এবং হচ্ছে । এর মধ্যে দেশের প্রত্যান্ত এলাকায় ইন্টারনেট সার্ভিস পৌঁছানো অন্যতম ।