যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা-পার্ট-২
- 27-Mar-2022 01:45AM
- Zahidul Islam
- 1046
৪র্থ অধ্যায়
যৌক্তিকতা
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকার ব্যবস্থা তাদের সাফল্যের শর্তাবলি বিভিন্ন সরকার ব্যবস্থার দোষ গুন প্রবনতা ও সরকার ব্যবস্থার সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে ব্যাপক মাত্রায় গবেষনা পরিচালিত হলেও এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা বিরল,
কেননা এর পূর্বশর্ত বিরল এ বিষয় নিয়ে তেমন একটি গবেষনা পরিচারিত হয় নি । তাই যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা বিরল কেননা এর পূর্বশর্ত বিরল এ বিষয় নিয়ে একটি রুচিশীল বিচার বিশ্লেষনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারনা প্রদান করা হলো ।
৫ম অধ্যায়
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য ঃ-
আধুনিক সরকার হিসেবে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার কিছু স্বকীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে । যে গুলো অপরাপর সরকার ব্যবস্থার চাইতে বেশ ভিন্ন । নি¤েœ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য সমূহ তুলে ধরা হল ।
১. দ্বৈত সরকার ব্যবস্থা ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় দু- ধরনের সরকার বিদ্যমান । যথা ঃ কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকার । এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার সমগ্র দেশের শাসন কার্য পরিচালনা করে আর প্রাদেশিক সরকার নিজ নিজ প্রদেশের শাসনকার্য পরিচালনা করে । উভয় সরকারই সংবিধান কর্তৃক প্রদত্ত সমতা লাভ করে এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে তারা স্বতন্ত্র স্বাধীন ও সমমর্যাদা সম্পন্ন।
২. লিখিত সংবিধান ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে সুনির্দিষ্ট ভাবে ক্ষমতা বন্টনের সংবিধান লিখিত হয় । সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি ক্ষমতার পরিধি, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার প্রভৃত বিষয় লিখিত অবস্থায় থাকে ।
৩. দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান
দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান অনুসরন যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য । এ ধরনের সংবিধান সাধারন সংখ্যাগরিষ্ঠতার সংশোধন করা যায় না বিধায় জটিল পদ্ধতি অনুসরন করতে হয় ।
৪. ক্ষমতার বন্টনঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আঞ্চলিক ক্ষমতার বন্টন । কেন্দ্রীয় সরকার ও আঞ্চলিক সরকার গুলোর মধ্যে সংবিধানের আলোকে ক্ষমতা বন্টিত হয় । কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্বে পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, মূদ্রা সংক্রান্তি বিষয়, অর্থাৎ রাষ্ট্রের সামগ্রিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহ রেখে শিক্ষা, স্বাস্থ্য,গৃহায়ন,খাদ্য, ও সেবার ন্যায় আঞ্চলিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ বিষয় সমূহ প্রদেশিক সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হয় ।
৫. প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনঃ
ক্ষমতা বন্টনের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উৎপত্তি হলেও প্রাদেশিক সরকারগুলো সার্বভৌম থাকে না । বরং এগুলো সর্বাধিক স্বায়ত্বশাষন ভোগ করে । প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য ।
৬.সংবিধানের প্রাধান্য ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় । এক কেন্দ্রীক সরকারে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে কেন্দ্রীয় বা আঞ্চলিক কোন সরকারের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত না হয়ে সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় ।
৭. দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় সাধারনত দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা বিদ্যমান । উচ্চকক্ষ ও নি¤œকক্ষ, উচ্চকক্ষ সাধারণত অঙ্গরাজ্যে সমূহের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এবং নি¤œ কক্ষ জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত হয় ।
৮. দ্বৈত নাগরিকত্ব ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রে দ্বি নাগরিকত্ব পরিলক্ষিত হয় । এক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক ফেডারেল সরকারের নাগরিকত্ব পাশাপাশি তার নিজস্ব অঙ্গরাজ্যের নাগরিকত্ব লাভ করে ।
৯. দ্বৈত আইনঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় দুই ধরনের আইন বিদ্যমান । একটি কেন্দ্রীয় অপরটি প্রাদেশিক আইন । কেন্দ্রীয় ক্ষমতা বলে আইন প্রনয়ন করা হয় । এছাড়াও আইনসভার মাধ্যমে প্রাদেশিক আইন প্রনয়ন করা হয় ।
১০. বিচার বিভাগের প্রধান্য :
বিচার বিভাগের প্রাধান্য যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় অন্যতম প্রধান মৌলিক বিষয় । এ ধরনের শাসন ব্যবস্থায় বিচার বিভাগ ও নিরপেক্ষতার পরিচয় দান করে বিচার বিভাগ সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে ।
সংবিধান এর ব্যাখা প্রসঙ্গে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে মত বিরোধ দেখা দিলে বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গন্য হবে ।
১১. সম-মর্যাদাঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় অঙ্গরাজ্য বা আঞ্চলিক সরকার গুলোর মধ্যে সমমর্যাদা বিদ্যমান থাকে ।
অর্থাৎ প্রত্যেক রাষ্ট্র এবং এর নাগরিকগন কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট সমমর্যাদা ও অধিকার পেয়ে থাকে । এসব ব্যাপারে কোন প্রকার বৈরী মৌনভাব পোষন করা হয় না ।
৬ষ্ঠ অধ্যায়
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সফলতার শর্তাবলী
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী । যাকে টিকিয়ে রাখতে হলে কতগুলো শর্ত অবশ্যই পালন করতে হয় । নি¤েœ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সফলতার শর্তাসমূহ প্রদত্ত হলো ঃ-
১. যুক্তরাষ্ট্রীয় মনোভাব ঃ
এ ব্যবস্থাকে সাফল্য মন্ডিত করার প্রথম এবং প্রধান উপাদান হলো, অঙ্গরাজ্য গুলোকে একটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকার ইচ্ছা পোষন করতে হয় । কিন্তু অঙ্গরাজ্যগুলো যদি এ মনোভাব পোষন না করে তবে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভবপর নয় ।
আবার শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকার ইচ্ছা পোষন করলেও চলবে না । সেই সাথে এদের আঞ্চলিক স্বাধীনতা রক্ষা এবং নিরাপদ রাখতে হবে ।
২.ভৌগলিক সান্নিধ্য ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার এর সফলতার আরেকটি প্রধান অন্যতম শর্ত হলো ভৌগলিক সান্নিধ্য । সেসব অঙ্গরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র গঠন করতে আগ্রহী সেসব রাজ্যে ভৌগলিক সান্নিধ্য মিল থাকা আবশ্যক । কেননা অঙ্গরাজ্যগুলো দুরবর্তী হলে একে আপরের নৈকট্য লাভ করতে পারে না । এজন্য ভৌগলিক সান্নিধ্য অপরিহার্য ।
৩.জাতীয়তা বোধের সুদৃঢ় বন্ধন ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার এর সফলতার আরেকটি উপাদান জাতীয়তা বোধের সুদৃঢ় বন্ধন । যার কারণ হলো জাতীয়তা বোধের সুদৃঢ় বন্ধন না থাকলে রাষ্ট্রের সংহতি নষ্ট হয়ে যায় ।
অধ্যাপক ডাইসী বলেন “ রাজ্যগুলোর মধ্যে ভৌগলিক, ঐতিহাসিক , বংশগত ও অন্যার্ন ঐক্য বিদ্যমান থাকতে হবে যেন প্রত্যেক জন এক জাতীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয় ।
৪. আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলঃ
এ সময় কার ব্যবস্থাকে সার্থক করে তুলতে হলে সকলকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে । যুক্তরাষ্ট্রীয় আইন নীতি মানার মৌনভাবের উপরে বহুলাংশে নির্ভরশীল । কোনটি সংবিধান মোতাবেক কোনটি সংবিধান বর্হিভূত পরিচালিত হচ্ছে তা সুপ্রীমকোট বিচার করবে ।
এবং বিচারালয় কর্তৃক যেকোন সিদ্ধান্ত গৃহিত হোক তা মেনে চলার স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন ।
৫. শাসনতন্ত্রের প্রাধান্য ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবন্থায় শাসনতন্ত্রকে দেশের সর্বোচ্চ ও পবিত্রতম আইন বলা হয় । এবং শাসন তন্ত্রই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অভিভাবক এজন্য শাসনতন্ত্র যাতে সুস্পষ্ট হয় তার জন্য এটি নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন । তাছাড়া এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে জাতির যেকোন জরুরি প্রয়োজনে যেন পরিবর্তন করা যায় ।
৬. অঙ্গরাজ্যের সমতা:
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার এর সফল করতে হলে যে সকল উপাদান তাদের রাজ্য গুলোকে একত্রিত করতে সবচে বেশি সাহায্য করে তার মধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সাদৃশ্য একান্ত উল্লেখযোগ্য ।
অধ্যাপক হুইলার বলেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কায়েম করতে ইচ্ছুক তাদের মধ্যে অবশ্যই সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐক্য থাকা দরকার । আবার শুধুমাত্র অঙ্গরাজ্যের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সাদৃশ্য থাকলেই হবে না । তারা যাতে স্বৈরাচারী না হতে পারে সেদিকে সমান দৃষ্টি দিতে হবে ।
৭. সমজাতীয়তার মনোভাব ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় বিভিন্ন রাজ্যের অধিবাসীদের মধ্যে শিক্ষা, সংস্কৃতি, আচার আচরন ও রীতিনীতিগত ভাবে এক ও অভিন্ন হতে হবে।
বাহ্যিক উপাদানের সাথে ভাবগত ঐক্য এবং ঐকানুভুতির ভিত্তিতে এক জাতীয় ভাবের সৃষ্টি হয় । যা যুক্তরাষ্ট্রের সমজাতীয়তার মনোভাব সৃষ্টি করে ।
৭ম অধ্যায়
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের গুনাবলি ঃ-
বহুল আলোচিত ও কৌশলগত কারনে বর্তমান সময়ের একটি জনপ্রিয় শাসন ব্যবস্থা হলো যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা । নি¤েœ এ ধরনের শাসন ব্যবস্থার গুনাবলী সমূহ আলোচনা করা হলো ।
১.কেন্দ্রিয় সরকারের দায়িত্ব হ্রাস ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় শাষন ব্যবস্থায় সংবিধানের আলোকে প্রদেশ গুলোকে দায়িত্ব বন্টন করা হয় । ফলে কেন্দ্রীয় সরকার অধিকতর গুরুত্বপর্ণ কাজে মনোযোগী হতে পারে । এর ফলে উভয় প্রতিষ্ঠানই সঠিক ও সুচারু ভাবে কাজ প্ররিচালনা করতে পারে ।
২. ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বৈরশাসন রোধ ঃ
কেন্দ্রিয় ও আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বন্টনের কালে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ক্ষমতার ভারসাম্য স্থাপিত হয় এবং সংবিধান অনুসারে প্রশাসন চালিত হয় । ফলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বৈরশাসন রোধ করা সম্ভব হয় ।
৩.শাসন ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় দক্ষ প্রশাসন গড়ে তোলা সম্ভব হয় । কেননা এ ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে সাংবিধানিক ভাবে ক্ষমতা বন্টনের ফলে কোন সরকারের উপর অতিরিক্ত কার্যভার আরোপিত হয় না ।
ফলে সকলেই ক্ষমতার সাথে শাসন কার্যে মনোযোগী হতে পারে । এতে করে শাসন কার্যের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।
৪.অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জাতীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থের মধ্যে সমন্বয় সাধনের সুযোগ পায় । কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক সহযোগিতা ও সাহায্য করার মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারে । ফলে জাতীয় অগ্রগতি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় ।
৫. পরীক্ষার সুযোগ ঃ
এর অন্যতম গুন হলো এখানে আইন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার সুযোগ থাকে । একটি অঙ্গরাজ্যের কোন একটি নতুন আইন প্রয়োগ করে তার কার্যকারিতা বা গুনাগুন যাচাই করা যায় এবং ভালো হলে তা অন্য রাজ্যে প্রয়োগ করা যায় ।
৬.জনগনের অংশগ্রহন ঃ
এ ধরনের শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন ঘটে । এতে সার্বিকভাবে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাজে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাওয়া যায় । এর জন্য জনগনের অংশগ্রহন বৃদ্ধি পায় ।
৭. জাতীয় মর্যাদা বৃদ্ধি ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের জাতীয় মর্যাদা বৃদ্ধি পায় । সুশাসন স্বদেশপ্রেম, নাগরিকদের মনস্তাত্ত্বিক সন্তুষ্টি, বৃহৎ রাষ্ট্রের নাগরিকত্বের গৌরব বোধ প্রভৃতি যুক্তরাষ্ট্রে অর্জিত হয় ।
৮. বৃহৎ রাষ্ট্রের জন্য সহায়ক ঃ
এরূপ শাসন ব্যবস্থা বৃহৎ রাষ্ট্রের জন্য উপযোগী । কারন বৃহৎ রাষ্ট্রকে একটি মাত্র কেন্দ্র থেকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা খুব বেশি কঠিন । যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় প্রশাসনিক একক কে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে ভাগ করে শাসন কার্য পরিচারনা কার সহজ হয় ।
৯. ক্ষতি ও অপচয় রোধ :
যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জাতীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থের মধ্যে সমন্বয় সাধনের সাথে সাথে ক্ষতি ও অপচয় রোধ করা সম্ভব হয় ।
১০ আতœরক্ষা ঃ
ক্ষুদ্র ও দূর্বল রাষ্ট্র গুলো ঐক্যবদ্ধ হলে শক্তি বৃদ্ধি পায় । ফলে যে কোন শত্রুর মোকাবেলা তারা আতœরক্ষা করতে পারে ।
৮ম অধ্যায়
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের দোষসমূহ ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় যেমন গুনাবলী রয়েছে তেমনি বেশ কিছু দোষ ত্রুটি রয়েছে । নি¤েœ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের দোষাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা হল ।
১. দুর্বল শাসন ব্যবস্থা ঃ
এ ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের কেউ পূর্ন ক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ পায় না । অঙ্গরাজ্যগুলোর স্বাধীন সত্তা ও স্বতন্ত্র স্বীকার করা হয় । কেন্দ্রীয় সরকার আঞ্চলিক সরকার গুলোকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না ।
এরফলে সামগ্রিক ভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন সুদৃঢ় করতে পারে না । ফলে সরকার দুর্বল হয় ।
২. পরস্পর বিরোধি আইন ঃ
এরূপ শাসন ব্যবস্থায় অনেকগুলো রাজ্য সরকার এর অস্তিত্ব থাকায় পরস্পর বিরোধী আইন প্রণীত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে । এ অবস্থায় বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন অসম্ভব হয়ে পড়ে । ফলে নানা রকম অশান্তি গোলযোগ সৃষ্টি হয় ।
৩. ব্যয়বহুল ঃ
এই শাসন ব্যবস্থা ব্যয়বহুল । একটির পরিবর্তে একাধিক সরকার থাকে বলে যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিচালনা ব্যয় বহুল ।
ফলে এটি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দুর্বল রাষ্ট্রের জন্য বেশ সমস্যার সৃষ্টি করে ।
৪. জরুরী অবস্থার অনুপযোগী ঃ
এই সরকার ব্যবস্থা জরুরী অবস্থার অনুপযোগী । বিপদজনক পরিস্থির সৃষ্টি হলে এ সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না । ফলে অঙ্গরাজ্যের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয় । যা জাতীয় স্বার্থহানি ঘটায় ।
৫. দায়িত্ব হীনতা ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকার এবং আঞ্চলিক সরকার গুলোর মধ্যে ক্ষমতার বন্টন থাকে না । সরকার দ্বৈত বলে দায়িত্ব হীনতার সম্ভাবনা থাকে ।
৬. আদালতের ভূমিকা ঃ
এ শাসন ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতের প্রাধান্য থাকে । শাসন তন্ত্রের ব্যাখ্যা কারক ও অভিভাবক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত অনেক সময় রক্ষণশীল ভূমিকা পালন করে ।
ফলে কোন প্রগতিশীল আইন প্রবর্তন করা যায় না ।
৭. দীর্ঘ সূত্রতা ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রীতা কাজ করে । বিধায় জরুরী ও সংকট কালে দীর্ঘসূত্রীতা কারণে সংকট সমাধানে বিলম্ব হয় ।
কারন এ ব্যবস্থায় বিদ্যমান দ্বৈত প্রশাসন ও বিভিন্ন সরকারের মতামত ও সহযোগীতা পেতে অনেক সময় নষ্ট হয় ।
৮. অনমনীয়তা ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় অনমনীয়তা পরিলক্ষিত হয় । কারণ এ সংবিধানের ন্যায় প্রশাসনের কাঠামো দুষ্পরিবর্তনীয় । যে কারণে এগুলোকে সহজে পরিবর্তন করে প্রয়োজনের সাথে খাপ খাওয়া সম্বব হয় না ।
যার ফলে অন্যার্ন শাসন ব্যবস্থার চাইতে অনেক বেশি নমনীয়তার ভাব পরিলক্ষিত হয় ।
৯. পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সমস্যা ঃ
এ ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক সন্ধি চুক্তি প্রভৃতি পররাষ্ট্র সংকান্ত বিষয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয় । কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্য সমূহের মধ্যে মতাদর্শগত বিরোধ দেখা দিতে পারে ।
কেননা অঙ্গরাজ্যগুলো দৃষ্টিভঙ্গি এক নয় বলে পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ ও কার্যকারিতার সমস্যা দেখা দেয় ।
১০.শাসন ব্যবস্থা মন্থর গতিসম্পন্ন ঃ
এরূপ শাসন ব্যবস্থার কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার গুলো পৃথক সরকার থাকার ফলে ক্ষমতা বন্টনের ব্যাপারে
এবং বিভিন্ন সরকার এর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ জটিলতার সৃষ্টি হয় ।
আবার অনেক সময় কোন একটি বিশেষ কার্য সম্পাদনের দায়িত্ব কোন সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ অযথাই সময়ের অপচয় হয় ।
“