যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা-পার্ট-3

৯ম অধ্যায়                  

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক প্রবনতা ঃ

                   সাম্প্রতিক কালে পৃৃথিবীর প্রায় সকল যুক্তরাষ্ট্রেই কেন্দ্রীকতার প্রতি এক প্রবল শোষন মূলক প্রবাহ দেখা দিচ্ছে । বিশে^র সকল যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় সরকার এর হাতে ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধির প্রসারতা প্রবনতা বেশ লক্ষনীয় । 
পাশাপাশি রাজ্য সরকার গুলো কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রনাধীন হয়ে পড়ছে । কেন্দ্রীয় সরকারগুলো তাদের এখতিয়ার কে ক্রমান্বয়ে বিকশিত করে তুলছে । আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রে এ প্রবনতাই
 কেন্দ্র প্রবনতা হিসেবে পরিচিত ।
যে সকল উপাদান কেন্দ্রীয় সরকারের অত্যাধিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে যেগুলো নি¤œরূপ ঃ

১.    যুদ্ধ ও সংঘাত ঃ 
      সংবিধানের আলোকে যুদ্ধের সময় কৌশল নির্ধারন, যুদ্ধ পরিচালনা, যুদ্ধের ব্যয় নির্ধারণ,জনগনের অর্থনৈতিক জীবন নিয়ন্ত্রন, উপাদান আমদানি ও রপ্তানি ইত্যাদি বিষয়ের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত । 

 লিপসন যুদ্ধময় পরিস্থিতিকে কেন্দ্রীয় করনের একটি বড় উপাদান বলে গন্য করেছেন । যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের উপর কর্তৃত্ব  ও নিয়ন্ত্রন আরোপ করছে এতে করে কেন্দ্রের অত্যাধিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে । 

২ যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি  ঃ
           বর্তমানে যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা প্রভূত উৎকর্ষ লাভ করছে । এ উৎকর্ষের সুবাদে আঞ্চলিকতা ও সংকীর্ণতা দূরীভুত হয়ে বৃহত্তর  জাতীয় ঐক্যের পথ সুগম হচ্ছে । 
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে কৃষি,শিল্প, আর্থিক লেনদেন ব্যবসা বাণিজ্যসহ সকল  আমদানি রপ্তানির পথ সুগম হচ্ছে । 

৩ কল্যানমূলক রাষ্ট্রের ধারনা ঃ
         আধুনিক রাষ্ট্র গুলোর কল্যাণমূলক  কার্যবলির পরিধি উত্তরাত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে । ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নাগরিকদের জন্য মৌল মানবিক চাহিদা পূরন ,জীবনমান উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা,বেকারত্ব, দারিদ্র মোচন সহ বুহুমুখী কল্যাণমূলক কার্যাবলি গ্রহন এর ফলে
 আঞ্চলিক সরকারের ক্ষমতা অনেকটা সংকুচিত হচ্ছে ।

৪ আঞ্চলিক সরকারের ব্যর্থতা ঃ
        যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি রাখতে রাজ্য সরকার গুলো বাধা দিতে সচেষ্ট হলেও বাস্তবে কেন্দ্রীয় সরকারের এই ক্ষমতা বৃদ্ধিকে রাজ্য সরকার গুলো প্রতিহত করতে ব্যর্থ হচ্ছে ।
 কারণ বিভিন্ন কারনে কেন্দ্রের প্রতি আঞ্চলিক সরকার নির্ভরশীল । এই নির্ভরশীলতাই কেন্দ্রের ক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম কারন ।

৫. সংবিধান সংশোধন ঃ
      যুক্তরাষ্ট্রীয় কেন্দ্রীয়  প্রবনতার অন্যতম কারন সংবিধান । কেননা আদি  সংবিধানের বিভাজিত ক্ষমতাকে সংশোধন করে কেন্দ্রকে অধিক ক্ষমতা প্রদান করা হচ্ছে । 
আর এভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ক্ষমতার পাহাড় হয়ে কেন্দ্রীয় করনের সৃষ্টি হয়েছে ।

 ১০ম অধ্যায়   

এক কেন্দ্রীক সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মধ্যে পার্থক্য ঃ
                   এককেন্দ্রীক সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মধ্যে পার্থক্য নি¤েœ আলোচনা করা হলো ঃ-

১ সরকারের রূপ ঃ
      এককেন্দ্রীক শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সকল প্রকার কার্য কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হয় । 
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় দু প্রকারের সরকারের অস্তিত্ব থাকে । যথা কেন্দ্রীয় সরকার ও আঞ্চলিক সরকার বা রাজ্য সরকার।
২    ক্ষমতা বন্টন :
     যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় সংবিধান অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার ও আঞ্চলিক সরকার গুলোর মধ্যে ক্ষমতা বন্টিত হয় । 
 কোন সরকারের কি কি ক্ষমতা  থাকবে তা সংবিদান অনুযায়ী নির্ধারিত হয় ।
পক্ষান্তরে সংবিধানের মাধ্যমে এককেন্দ্রীক সরকার ব্যবস্থায় জাতীয় ও স্থানীয়  সব বিষয়ই কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে । প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকার প্রদেশের সৃষ্টি করতে পারে ।


৩    সংবিধানের ধরন ঃ
        যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় সংবিধানের প্রাধান্য বজায় রাখার জন্য সংবিধান কে রিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় করে তোলা হয় । এরূপ সংবিধানকে সহজে পরিবর্তন করা যায় না  ।
অন্যদিকে এককেন্দ্রীক শাসন ব্যবস্থায় সংবিধান লিখিত বা অলিখিত হতে পারে এবং দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের তুলনায় সু পরিবর্তনীয় সংবিধানের উপর জোর দেওয়া হয়  ।

৪    সংবিধান সংশোধন ঃ  
         যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধান সাধারনত দুষ্পরিবর্তনীয় হয়ে থাকে । এক্ষেত্রে সংশোধনের জন্য বিশেষ পদ্ধতি অনুসরন করতে হয় । কিন্তু এককেন্দ্রীক ব্যবস্থায় সংবিধান সুপরিবর্তনীয় হয় । এক্ষেত্রে সাধারন আইনের ন্যায় সংবিধান পরিবর্তন করা যায় ।

৫    অনুগত্য প্রকাশ ঃ 
          এক কেন্দ্রীক শাসন ব্যবস্থায় জনগন কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি অনুগত্য প্রকাশ করে । কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় অঙ্গরাজ্য ও সরকারের প্রতি অনুগত্য প্রকাশ পায় । 
 

৬. নাগরিকতা ঃ
         এককেন্দ্রীক সরকার ব্যবস্থায় দ্বৈত নাগরিকতা থাকে না ।   অর্থাৎ সমগ্র দেশে একই নীতি অনুসরন করা হয় । 
  কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় দ্বৈত নাগরিকতার নীতি অনুসরন করা হয় ।

৭    ব্যয়ের ক্ষেত্রে ঃ
       যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিচালনা করা ব্যয় বহুল । কিন্তু এককেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা পরিচারনা করা ব্যয় বহুল নয় । এছাড়া এককেন্দ্রীক সরকার ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় আইন সভার প্রধান্য বিদ্যমান ।
 কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে আইন সভার পরিবর্তনে সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় ।


উপসংহার ঃ
   উপযুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা বর্তমান বিশে^র অধিকাংশ দেশেই একই প্রবল ঝোক সৃষ্টি করেছে । প্রায় সকল  যুক্তরাষ্ট্রেই কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা ও মর্যাদা অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পাশাপাশি রাজ্য সরকার গুলোর ক্ষমতা ও মর্যাদা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে এবং রাজ্য গুলো কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রনধীন হয়ে পড়ছে ।
 জনকল্যাণ মূলক রাষ্ট্রয়ত্ব, পরিকল্পিত অর্থব্যবস্থা আর্থিক সংকট, যুদ্ধ ও যুদ্ধের ভীতি, যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক বিস্তার প্রভৃতির কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বহুগুনে বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা জনপ্রিয়তা অর্জন করছে ।

 

গ্রন্থপঞ্জি

১.    মোরশিদু জ্জামান       রাজনৈতিক তত্ত্ব  ও সংগঠন
২.    এ.কে.এম শহীদ উল্লাহ্   রাজনৈতিক তত্ত্ব  ও সংগঠন
৩.    এস এম নুরনবী         রাজনৈতিক তত্ত্ব  ও সংগঠন
৪.    এস এম নাসির উদ্দিন   রাজনৈতিক তত্ত্ব  ও সংগঠন
৫.    ড. অনদিকুমার মহাপাত্র  রাষ্ট্রবিজ্ঞান 
৬.    ড. এমাজউদ্দিন আহমদ  রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কথা 
৭.    সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম  আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান
৮.    সৈয়দ মকসুদ আলী   রাষ্ট্রীয় সংগঠনের রূপরেখা
৯.    ড. মোঃ মকসুদুর রহমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মৌলনীতি
 

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন