রাজনৈতিক আদর্শ হিসাবে জাতীয়তাবাদ

                          প্রথম অধ্যায়

ভূমিকাঃ
    জাতীয়তাবাদ হলো একটি রাজনৈতিক আদর্শ । শুধু তাই নয় জাতীয়তাবাদ হল একটি অতিবিতর্কিত রাজনৈতিক আদর্শ । এ রাজনৈতিক আদর্শ। একদিকে যেমন ধ্বংসের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে অপরদিকে তেমনি সৃষ্টির সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। 
উগ্র জাতীয়তাবাদের বিকৃত উম্মাদনা সভ্যতার সংকট সৃষ্টি করেছে। আবার সুস্থ জাতীয়তাবাদের আত্মিক আবেদন পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপানিত করেছে। 
বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে জাতীয়তাবাদের এ উভয়বিদ প্রকাশই পরিলক্ষিত হয়। সুতারাং মানব সভ্যতার পরিপেক্ষিতে একটি রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে জাতীয়তাবাদের আলোচনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ । 

জাতীয়তাবাদ (ঘধঃরড়হধষরংস)ঃ 
                              আধুনিককালে জাতীয়তাবাদ নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আদর্শ এটাকে আধুনিক বিশে^র রাজনীতির একটি প্রধান নিয়ন্ত্র কারী শক্তি বললেও অত্যুক্তি করা হয়না। জাতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থার উন্থানের সাথে সাথে আদর্শ বিশ^ ইতিহাসকে নাড়া দিয়েছে।

জাতীয়তাবাদ আধুনিক কালে বিশে^র রাজনীতির একটি নিয়ন্ত্র কারী শক্তি হিসেবে কাজ করা হয় না কারণ তারা বিশে^ সকল কিছু আদর্শ ইতিহাস বিষয়ে বেশি যুুক্তি দিয়ে থাকে। 

 এটি বিশ^ রাজনীতিতে পরিবর্তন ও কর্মকান্ডের সর্বাধিক গতিশীল শক্তি বটে।উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর বিশ^ মানচিত্রে এটি চরম পরিবর্তন ঘটাতে সাধন হয়েছে।  

জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা (উবভরহরঃরড়হ ড়ভ ঘধঃরড়হধষরংস)ঃ 
                                             বিশেষ্য পদ জাতি থেকে এর বিশেষণ জাতীয়তা এবং সে থেকেই যে মতবাদ জন্ম নিয়েছে তার নাম হলো জাতীয়তা বাদ । তাই জাতীয়তাবাদ  একটি মতবাদ বা মতাদর্শের নাম। 
জাতীয়তাবাদ বলতে এমন মতাদর্শকে বুঝায় যা জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রকেই আদর্শ ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে সমর্থন চায়। 

প্রামাণ সংজ্ঞা:  জাতীয়তাবাদের সঠিক ও স্বয়সম্পূর্ণ সংজ্ঞা আজও খূঁজে পাওয়া যায়নি। তবে রাষ্ট্র বিজ্ঞানগন নিরন্তর অনুসন্ধান দ্বাড়া এর সংজ্ঞা নিরুপনের প্রচেষ্টার বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গণ প্রদত্ত জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা প্রদান করা হলো:- 

* অধ্যাপক লয়েড(চৎড়ভ ষরড়ুবফ) এর মতে, 'ঘধঃরড়হধষরংস রং ঃযব ৎবষরমরড়হ ড়ভ ঃযব সড়ফবৎহ ড়িৎষফ' অর্থাৎ জাতীয়তাবাদ একটি ভাবগত বা মানসিক ধরনা বিশেষ।
* আরনল্ড জে টয়েনবী (অৎহড়ষফ ল.ঞড়ুহনবব) লিখেছেন,' ঘধঃরড়হংষরংস রং হড়ঃযরহম সধঃবৎরধষ ড়ৎ সবপযধহহরপধষ নঁঃ ধ ংঁনলবপঃরাব ঢ়ংুপযড়ষড়মরবধষ ভববষরহম রহ ধ ষরারহম ঢ়বড়ঢ়ষব'অর্থাৎ জাতীয়তাবাদ কোন রুপ বস্তুগত বা যান্ত্রিক অনুভৃতি নয় বরং এক  প্রকার আত্মিক ও মানসিক অবনুভৃতি । 
* জি.পি.গুচ এর মতানুসারে জাতীয়তাবাদ এক ধরনের জৈবিক আধাত্মিক সত্তা । 
                        
                      দ্বিতীয় অধ্যায় 

জাতি ও জাতীয়তার পার্থক্য:
 আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ জাতি ও জাতীয়তার পার্থক্য নির্দেশ করে বলেন, যখন কোন জনসমষ্টি মধ্যে ভৌগলিক সান্নিধ্য এবং ভাষা রীতিনীতি ধর্ম ইতিহাস ও ঐতিহ্য ইত্যাদি অভিন্নতা থাকার ফলে তাদের  মধ্যে যে একাত্মতার সৃষ্টি হয় সেই একাত্মতার ভিত্তি হল জাতিয়তা।

 কিন্তু জাতি হলো জাতীয়তাবোধে উদ্ধুদ্ধ সেই জনসমষ্টি যারা রাজনৈতিক চেতনায় উজ্জীবিত এবং স্বাধীন অথবা স্বাধীনতা লাভের আগ্রহী । 
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে জাতি জাতিয়তার পার্থক্য নিম্মেক্ত ভাবে বর্ণনা করা হলো:
১। সাধারণ সৃত্র : জাতীয়তা সৃষ্টি হয় ভৌগলিক সান্নিধ্য ভাষা রীতি নীতি সাহিত্য ইতিহাস ঐতিহ্য বংশগত ধমীয় ও মানসিক ঐক্যবোধ হতে । পাশাপাশি জাতি সৃষ্টির জন্যে জাতীয়তা বোধের উপস্থিতি অপরিহার্য । 
২। ধারনা: জাতীয়তা হলো মানসিক বা ভাবগত ধারনার ফল। পক্ষান্তরে মানসিক ধারনা রাজনৈতিক চেতনা স্বাধীনতা লাভ হচ্ছে জাতি। 
৩। সাংগঠিত অবস্থা: জাতীয়তার সঙ্গে রাজনৈতিক সংগঠনের কোন সম্পর্ক নেই । অপরদিকে জাতিতে রাজনৈতিক সংগঠন অপরিহার্য।
৪। সুসংহতের অবস্থা: জাতীয়তা খুব বেশি সসংহত নয়। জাতি অত্যনÍ সুসংহত। 
৫।  পরিনত অবস্থা : জাতীয়তা হলো একটি প্রাথমিক অবস্থা। আর জাতি হল জাতীয়তার পরিনত রুপ। 

৬। সংখ্যা: একটি দেশে দেশে একাধিক জাতীয়তা থাকতে পারে। কিন্তু একটি দেশে একটি মাত্র জাতি থাকে। কখনও একাধিক জাতি একটি দেশে থাকতে পারে না। 

জাতি ও রাষ্ট্র:
স্বাধীন রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে জাতীয় জন সমাজ জাতিতে পরিনত হয়। একারণে সাধারণ ভাবে মনে করা হয় যে, জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে সুুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান ।
 অধ্যাপক গিলক্রিস্ট ও অধ্যাপক হায়েস উভয়ের মধ্যে প্রার্থক্য প্রসঙ্গে আলেচনা করেছেন। আলোচনা গুলো নি¤œরুপ:-

১। রাষ্ট্র গঠিত হয় চারটি উপাদার নিয়ে। এ চারটি উপাদান হলো জনসমষ্টি সরকার নিদির্ষ্ট ভৃখন্ড ও সার্বভৌমত্ত্ব । কিন্তু জাতি গঠনের জন্য এ উপাদান গুলো প্রয়োজন হয় না।
 
২। রাষ্ট্র সাধভৌম ক্ষমতার অধিকারী । এ ক্ষমতার অধিকার রাষ্ট্রকে বিশিষ্টতা প্রদান করেছে। জাতি বলতে যা বোঝায় তার সাধভৌম ক্ষমতা বা ক্ষমতা প্রয়োগের যন্ত্র সরকারের সেই রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও ইচছা সরকারে মাধ্যমে প্রকাশিত হয় ।
 ৩। রাষ্ট্র একজাতি ভিত্তিক বা বহু জাতি ভিত্তিক হতে পারে। একজাতি ভিত্তিক রাষ্ট্র হলেঅ হচ্ছে জার্মানী জাপান হাঙ্গেরী সুইডেন প্রভৃতি । অপরদিকে বহু জাতি ভিত্তিক রাষ্ট্র হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মালয়েশিয়া চীন সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি।
 
৪। একটি নির্দিষ্ট ভৃখন্ডে একটি জনসমাজ আইগত ভাবে সংগঠিত হলেঅ রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় কিন্তু জাতি বলতে এমন এক জনসমাজকে বুঝায় বোঝায় যাদের মধ্যে একসঙ্গে বসবাসের সাধারণ ইচ্ছ্ াআছে এবং যারা মনস্তাত্বিক ভাবে সংগঠিত হয়।

 ৫। জাতির নিজস্ব রাষ্ট্র বিলুপ্ত হতে পারে এতদস্বত্ত¦ও জাতি টিকে থাকতে পারে।

৬। রাষ্ট্র হলো একটি আইনগত ধারণা। এরাজনৈতিক বাস্তবতা বিতর্কের উদ্ধে কিন্তু জাতি হলো একটি ভাবগত বা  মনস্তাক্তি ধারনা। 

৭। রাষ্ট্র প্রতিষ্টিত থাকে জনগনের আনুগত্যের উপর জাতি প্রতিষ্টিত থাকে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ চেতনার উপর।
 
                                    


                   

                তৃতীয়  অধ্যায়

জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ:
 জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পকিত আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কারণ এ আলোচনার আলোকে জাতীয় তাবাদের প্রকৃতি যথাযথ ভাবে পর্যালোচনা করা যাবে এবং ্ রাজনৈতিক আদর্শের সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে।

 উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের দিক বিবেচনা করলে জাতীয়তাবাদের বয়স খুব বেশি দিনের নয়। তিন শতাব্দী ধরে জাতীয়তাবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট ধ্যান ধারনার উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটেছে। চতুদর্শ শতাব্দীতে জাতীয়তাবাদের ধারনার অস্পষ্ট ও অপ্রত্যক্ষ উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

 তরে পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে জাতীয়তাবাদের প্রথম প্রেরনা আসে। তবে প্রকৃতি জাীয়তবাদের দানা বাঁধে অষ্টাদশ শতাব্দীতে আর উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জাতীয়তাবাদ পরিপূর্ণভাবে বিকাশ লাভ করে। 
যখন পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে জাতীয়তাবাদের আগমন ঘটে তখন প্রথমে সারা বিশে^  মাঝে জাতীয়তাবাদ সুন্দর ভাবে বিস্তার লাভ করেছিল। 

জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্ট্য বা উপাদান সমূহ: যে সব উপাদান কোন একটি জনসমাজকে ঐক্যবাদ জাতীয়তাবাদে রুপান্তরিত করে সেগুলোকে জাতীয়তাবাদের উপাদান বলা হয় ।

 জাতীয়তাবাদ বিশেষ কোন উপাদনের দ্বাড়া গঠিত নয় এর জন্য কাজ উপাদানের সমন্বয় আবশ্যক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানগণ জাতীয়তাবাদের সাহায্যকারী উপাদান গুলোকে দু ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা: 
ক. বাহ্যিক উপাদান এবং  
খ. ভাবগত উপাদান 
নিচে বাহ্যিক ও ভাবগত উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলো:-

ক. বাহ্যিক উপাদান: ভৌগলিক সান্নিধ্য অভিন্ন বংশ বশগত বা কুলগত বা উদ্ভবগত ঐক্য ভাষা ও সাহিত্যগত ঐক্য ধর্মগত ঐক্য রাজনৈতিক ও রাষ্ট্র ঐক্য অর্থনৈতিক ঐক্য  দ্বন্দ্ব কলহের মধ্যে থেকে ঐক্য ভাষা ও ঐতিহ্য ইতিহাস প্রভৃতি উপাদান 

বাহ্যিক দিক থেকে জনসমাচনা বা ঐক্য বদ্ধ করে জাতীয় তাবাদ গঠনে সহায়তা করে । তাই এগুলোকে জাতীয়তাবাদের বাহ্যিক উপাদান বলে অভিহিত করা হয়। 

খ. ভাবগত উপাদান: সুখ দুঃখ অভব অভিযোগ সম্পর্কে অভিন্ন ধারনা ও সমরাষ্ট্র নৈতিক চেতনা জাতীয় জনসমাজের ভাবগত উপাদান হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। বাহ্যিক উপাদান সমূহের ঐক্য ভিত্তিক সমচেতনাও মানসিক ঐকানুভৃতি সৃষ্টি ওসঞ্চারে সাহায্য করে থাকে।

 বস্তুত পক্ষে জাতীয়তাবাদ গঠনের ক্ষেত্রে উল্লিখিত বাহ্যিক উপাদান গুলোর কোনটিই এককভাবে অপরিহার্য নয়।  এদের যে কোন একটি বা কয়েকটি বাদ দিয়ে ও জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি হতে পারে। 

বস্তুত জাতীয়তাবাদ গঠনে ভাবগত  উপাদানই হলো প্রধান । ফরাসী অধ্যাপক রেনান যথার্থই বলেছেন যে, ঞযব রফবধ ড়ভ হধঃরড়হধষরঃু রং বংংবহঃরধষষু ংঢ়রৎরঃঁধষ রহ পযধৎধপঃবৎ অর্থাৎ জাতীয়  জনসমাজ সম্পর্কে ধারনা মূলত ভাবগত জনসমাজের মধ্যে মনোগত একাত্মবোধের অস্তিত্ব জাতীয়তার অপরিহার্য উপাদান।

 কোন জনসমষ্টি যখন বিশ^াস করে যে তাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য অভিন্ন তারা সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনা উত্থান পতন গৌরব গ্লানির সমান অংশীদার তখনই সেই জনসমষ্টির মধ্যে জাতীযতাবোধ দৃঢ় হয় এবং জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি হয় । 

সুতারাং জাতীয়তাবোধে প্রকৃতপক্ষে একটি ভাবগত ধারনা মানসিক অনুভূতি একটি বিশেষ মনোবৃত্তি। কোন জনসমষ্টি জাতীয় চেতনার ভিত্তিতে নিজেদের জাতীয় জনসমাজ হিসেবে মনে করলে জাতীয়তাবাদ হিসেবে গণ্য হয়। 

জাতীয়তাবাদের পক্ষে যুক্তি বা মূল্য বিচার: 
জাতীয়তাবাদের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের রাজনৈতিক আদর্শ তাত্বিক আলোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আদর্শ । এ আদর্শের সমর্থনে বিভিন্ন যুক্তির অবতারনা করা হয়। যেমন- 

১। একটি মহান আদর্শ : জাতির জীবনে জাতীয়তাবাদ একটি মহান আদর্শ। এ হল  একটি গভীর অনুপ্রেরনা। জাতীয়তাবাদ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ এবং দেশপ্রেমে উদ্ধদ্ধ বারে। 

২। স্বাধীনতা সংগ্রামেরউদ্দীপক:
 মুক্তিকামী দেশের পক্ষে জাতীয়তাবাদ আশাবাদ স্বরুপ। জাতীয়তাবাদের দ্বাড়া গভীর ভাবে উদ্ধুদ্ধ হয়ে পরাধীন ও দুর্বল জাতি মরনপন স্বাধীনত্ সংগ্রামে সামিল হয় এবং স্বাধীন ও শক্তিশালী রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করে। 

৩। মানা সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করে: জাতীয়তাবাদের জনক হিসেবে ইতালিক দার্শনিক ম্যাৎসিলির কথা বলা হয়। তার মতানুসারে বিভিন্ন গুণ ও প্রতিভার বিকাশ সাধনের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ মানবসভ্যতাকে সমৃদ্ধ ও উন্নত করে। 

৪। সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রস্তুত: জাতীয়তাবাদ জাতি সমৃহের মধ্যে সংঘাত সংঘর্ষের আশংকা দূর করে এবং সৃষ্টি করে। জাতি নিজের উন্নতি ত্বরান্বিত করে এবং অপরের উন্নতিতে সাহায্য করে । জাতীয়তাবাদের মূল কথাই হলো নিজে বাঁচ এবং অপরকে বাঁচাতে দাও। 
৫। আন্তর্জাতিকতার পরিপূরক: জাতীয়িতাবোধ জাতিকে নিরে জাতীয় চরিত্র ও স্বকীয়তা সংরক্ষনে যেমন উদ্দীপ্ত করে তেমনি অপর জাতির সঙ্গে সদ্ভাব ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে অনুপ্রানিত করে । জাতীয়তাবাদ হলো আন্তর্জাতিক তার পরিপূরক। 
৬। দেশপ্রেম সৃষ্টি: জাতীয়তাবোধ নাগরিকদের মধ্যে দেশ প্রেম সৃষ্টি করে । ফলে নাগরিকগণ ব্যক্তিগত দলীয় গোষ্ঠীগত স্বার্থের উর্ধ্বে রাষ্ট্রর স্বার্থেকে স্থান দেয়। তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় গভীর ঐক্যবোধ। 

উপযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বোঝা যায় যে জাতীয়তাবাদের গুরুত্ব কতখানি । সুষ্ঠু জাতীয়তাবাদ মানব জাতির সহায়ক এবং এর গুরুত্ব অপরিসীম। 
                           


                        চর্তুথ অধ্যায়
  
রাজনেতিক আদর্শ হিসেবে জাতীয়তাবাদের গুরুত্ব:
আধুনিককালে জাতীয়তাবাদ হলো একটি ভাবগত ধারণা । সমমনোভাবাপন্ন জনসমষ্টির মধ্যে জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি হয়। এর সাথে দেশপ্রেমের ভাবধারা সংযুক্ত হয়ে রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে গড়ে উঠে এবং পরিশেষে তা জাতীয়তাবাদের জন্ম দেয়।

 জাতি থেকে জাতীয়তা থেকে জাতীয়তাবোধ এবং অবশেষে জাতীয়তাবাদে রুপান্তরিত হয়। জাতির প্রাণশক্তি হলো জাতীয়তাবাদে এবং তা হলো জাতির পরিচয় ।

 জাতীয়তাবাদ মৃর্ত  হয়ে উঠে রাজনৈতিক ইচ্ছা যা কিছু সংখ্যক লোককে নিদির্ষ্ট ভৃখন্ডে একসাথে বসবাসের প্রেরনা দেয়।  এআদর্শ অনুপ্রাণিত জনতা একে অপরকে ভালবাসতে শিক্ষা দেয় এবং রাজনৈতিক বন্ধনে তা মৃর্ত হয়ে উঠে। 
প্রতিটি জাতির মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা লাভের ইচ্ছায় অন্তর্ভূক্ত ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ করে । সুতারাং জাতীয়তাবাদ হলো রাজনৈতিক আদর্শ এবং আদর্শে অনুপ্রানিত জনগণ নিজেদের স্বতন্ত্র সত্তা নিয়ে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে চায়।

বলা যায়, রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে জাতীয়তাবাদ জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের চরম পরিণতি । এ প্রসঙ্গে লাসিক বলেন মানুষের সঙ্গলিস্পু মনোবৃত্তি ও শায়ত্ত্বশাসনে প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা শক্তি হলো এর মূল ভিত্তি। 

এটি হলো এক মহান আদর্শ যার দ্বাড়া মানুষ মুক্তি গন্ধান পায়। আদর্শে উদ্ধুদ্ধ জনতা নিজেদের উন্নতি বিধানে প্রান উৎপূর্ণ পর্যন্ত করতে প্রস্তত থাকে। এটা নিজের জাতিকে ভালবাসতে শিক্ষা দেয়। নিজেদের ভালবাসতে হলেই যে অন্যদের  অবমাননা বা ঘৃণা করতে হবে এমন আদর্শ প্রকৃত জাতীয়তাবাদীর হতে পারে না।
 মূলত আদর্শ জাতীয়তাবাদ নিজেদের যেমন শ্রদ্ধা করতে শিক্ষা দেয় তেমনি অন্যদের প্রতিও সম্মান প্রদর্শন করে। মূল কথা হলো নিজে বাঁচ এবং অপরকে বাঁচতে দাও।
 আমরা যদি সঠিক বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখতে পাই যে সাম্য মৈত্রী ও স্বাধীনতা এতিনটি হলো মূল আদর্শ । এ সব আদর্শ মানব সভ্যতার উন্মেষ ও বিকাশে সহায়ক। 

জাতীয়তাবাদের সীমাবদ্ধতা: জাতীয়তাবাদের সমর্থনসূচনা নানা রকম যুক্তি আছে। তবুও  বিভিন্ন মনীষী ও চিন্তাবিদ জাতীয়তাবাদের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। অনেকের মতে জাতীয়তাবাদ মানব সভ্যতা ও বিশ^শান্তির মতে জাতীয়তাবাদ মানব শক্রস্বরুপ। জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে সাধাণত নি¤œলিখিত যুক্তি সমূহের অবতারনা করা হয়:-

প্রথমত, জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সৃষ্টি হলেই যে জনগণের অধিকার গণ স্বাধীনতা ও প্রগতি নিশ্চিত হবে এর কোন ঐতিহাসিক প্রমান নেই। যেমন সুইজার ল্যান্ডে বিভিন্ন জাতির জনসাধারণ থঅকা সত্ত্বেও সেখানে জনসাধারনের সাধীনতা পরিপূর্ণভাবেই বিদ্যমান।
 
দ্বিতীয়ত, ভৌগলিক কারনে অনেক সময় জাতীয়তাবাদকে সমর্থনে করা যায় না। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে একাধিক জাতি ভূখন্ডগতভাবে পরস্পরের সাথে  নিবিড়ভাবে মিলে মিশে বসবাস করছে। 

তৃতীয়ত, গণতন্ত্রের স্বার্থে জাতীয়তাবাদের স্বীকৃতি অপরিহার্য। এ যুক্তির কোন ভিত্তি নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুইজারল্যান্ড এবং আর ও অনেক বহু জকতি সমন্বিত দেশে গণতন্ত্রের বিরাট সাফল্য পরিলক্ষিত হয়। 

চতুর্থত, বিশে^ অনেক প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র আছে যেগুলোতে জাতীয়তাবাদের নীতি বাস্তবায়িত হলেও ঐ সকল প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রই ভেঙ্গে যাবে এবং ক্ষুদ্র অসংখ্য রাষ্ট্রে পরিনত হবে। ফলে বিভিন্ন জাতির মধ্যে আত্মকলহ প্রভুত্ব লিপ্সা প্রতিশোধস্পৃহা ইত্যাদি তীব্ররুপে প্রকাশ পাবে। শেষ পর্যন্ত এর পরিনতি হয় যুদ্ধ।
 
পঞ্চমত, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দুর্বল হবার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে বিশ^ রাজনীতিতে তারা নিরাপত্তার জন্য কোন শক্তিশালী রাষ্ট্রের তাঁবেদারেই পরিনত হতে পারে। এরুপ হলে আন্তর্জাতিক উত্তেজনাই শুধু বৃদ্ধি পাবে না বরং তাদের নিজস্ব স্বাধীনতা ও  বিপন্ন হবে।
 
ষষ্ঠত, জাতীয়তাবাদী উগ্রতা কোন জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র সৃষ্টি করতে পারে কিন্তু সেই রাষ্ট্রের যথেষ্ট অর্থনৈতিক সম্পদ না থাকলে এ উগ্রতা কোন জাতিকে টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হয় না। 

উপরোক্ত দোষ ক্রটি সত্ত্বে ও এ কথা অনস্বীকার্য যে, জাতীয়তাবাদ নীতির যথেষ্ট রাজনৈতিক তাৎপর্য ও গুরুত্ব রয়েছে। 
জাতীয়তাবাদও সভ্যতা: 
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষকে জাতীয়তাবাদ গণতান্ত্রিক আদর্শের অনুপন্থী হিসেবে মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রানিত করেছে। জাতীয়তাবাদের মহান আদর্শ বিশ^সভ্যতার সমৃদ্ধ করেছে। প্রত্যেকে জাতির আপন আপন সাহিত্য চারুকলা ঐতিহ্য এবং সামগ্রিকভাবে কৃষ্টির বিকাশের মধ্য দিয়েই বৈচিত্র্যময় বিশ^সভ্যতা উন্নত হয় সমৃদ্ধ হয়। জাতীয়তাবাদের বিস্তৃতি ও ভয়ঙ্কর রুপ বিশ^ সভ্যতার প্রতি মারাত্মক হয়ে দেখা দিয়েছে।

 অধ্যাপক লাস্কি এর মতে, ডযবহ হধঃরড়হধষরংস ফবসধহফং ঢ়ড়ষরঃরপধষ ধঁঃড়হড়সু ঃযধঃ রং ংড়াবাবরমহ ংঃধঃব ঃযব হববফং ড়ভ পরারষরুধঃরড়হ ঃবমরহ ঃড় বসবৎমব. (ঐ.ঔ.খধংশর, অ এৎধসসধৎ ড়ভ ঢ়ড়ষরঃরপং.চ.২৩৯) জাতীয়তাবাদ ও বিশ^সভ্যতা সম্পর্কে নিন্মে যুক্তি উপস্থাপন করা হল:-

১। সভ্যতার সংকট: জাতীয়তাবাদের প্রতি গভীর অনুরাগের ভিত্তিতে নিজেদের মধ্যে সমল বিষয়ে উন্নত ধারনা এবং অন্য জাতির সকল কিছুকে হের জ্ঞান জাতির মধ্যে দেখা দেয় ।
 জাতির মধ্যে এক অন্ধ আবেগের সৃষ্টি হয় এবং একেই উগ্র জাতীয়তাবাদ । এর ফলে জাতির মনে নিজের সম্পর্কে গর্ব জাতির প্রতিঘৃণা জন্মায়। 

২। সার্বভৌমত্ব ও শান্তির পথে বাধা: উগ্র জাতীয়তাবাদ নিজে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব ও শান্তি শৃঙ্খলা বিঘেœর কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।
 তামিল জাতীয়তাবাদ এর বিকাশ ঘটলে ভারত অবস্থানরত ভারতীয় তামিল গোষ্ঠী ভারত সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। সংকীর্ণ তামিল জাতীয়তাবাদ এতে দ্বন্দ্ব  সৃষ্টির মূল কারণ। 

৩। বিশ^শান্তির পরিপন্থী: সংকীর্ণ ও উগ্র জাতীয়তাবাদ আন্নর্জাতিক সহযোগিতা ও বিশ^ ভাতৃত্বের পথে একটি প্রধান অন্তরায়। একদল উগ্র জাতীয়তাবাদ আছে যারা জাতীয় সার্বভৌমত্ত্বের নামে জাতি পুঞ্জের বিরোধীতা করেছেন। 
৪। বৃহৎ শক্তিগুলোর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তীব্রতর: জাতীয়তাবাদ প্রসারের ফলেই আজকের পৃথিবীর কোন দেশে কোন ঘটনা তার প্রতিক্রিয়া অন্য দেশেও দেখা দেয়। ফলে সমস্যা সংকুল  পৃথিবীতে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বৃহৎ শক্তি মধ্যে তীব্রতর হয়।
 ৫। সা¤্রাজ্যবাদের পথ প্রদর্শক: জাতীয়তাবাদ বিকাশের ফলে অনেক জাতিই নিজেদেরকে মনে করেন যে তারাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জাতি । জাতীয়তাবাদ উগ্ররুপ ধারণ করে এবং সা¤্রাজ্যবাদের পথে অগসর হয়ে এর শেষ পরিনতি হিসেবে দেখা যায় যুদ্ধ বা সভ্যতার প্রতি এক মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায় । 

৬। পারস্পরিক সন্দেহ ও দ্বন্দ্ব: বর্তমান বিশে^ জাতীয়তাবাদ এমন একটি সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যেখানে কেবল সন্দেহে ও দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। প্রত্যক জাতীয় রাষ্ট্র অপর  প্রতিবেশী জাতীয় রাষ্ট্রকে সন্দেহের চোখে দেখে।
 
৭। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে অকল্যানকর : উগ্র জাতীয়তাবাদের কেবল বিশ^ সভ্যতার আলোকে হুমকিস্বরুপ নয়। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ও অকল্যানকর । 
উপরোক্ত আলেচনা শেষে প্রতিপন্ন হয় যে, আদর্শ জাতীয়তাবাদ মানব সভ্যতার সমৃদ্ধি ও উন্নতির সহায়ক ভূমিকা পালন করে । কিন্তু সংকীর্ণ বা উগ্র জাতীয়তাবাদ সা¤্রাজ্যবাদের রুপান্তরিত হয়ে মানব সভ্যতার সংকট সৃষ্টি করে। 
                      পঞ্চম অধ্যায়

জাতীয়তাবাদ বনাম আন্তর্জাতিকতাবাদ:
বর্তমানে বিশে^র রাষ্ট্রনৈতিক চিনÍা জগতে জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদ হলো দুটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। এ শতাব্দী থেকে এদুটি বিষয় ও তাদের পারস্পরিক সম্পর্কে বিষয়ক আলোচনা নানা কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে । 

বর্তমানে শতাব্দীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার ব্যাপক উন্নতি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে রাষ্ট্র সমূহের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা দু- দুটি বিশ^যুদ্ধ শানিÍ প্রতিষ্ঠা ও মানব সভ্যতার অস্তিত্ব রক্ষা প্রভৃতি বহুবিধ কারনে জাতীয়বাদ বনাম 

আন্তর্জাতিকবাদের সমস্যাটি বর্তমানে দুনিয়ার বহু আলোচিত বিষয় সমূহের মধ্যে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্তমান পরিবর্তনশীল বিশে^ জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের অপর্যাপ্ততা বা স্ববিরোধীতা বিভিন্নভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। যেমন:Ñ

প্রথমত, বিংশ শতাব্দী তৃতীয় দশকে দ্বিতীয় বিশ^ যুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলোতেই বিশে^র শান্তিকামী মানুষের মনে উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , দান্তে প্রমুখ মনীষিগণ জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হল। এ শ্রেণির চিন্তাবিদদের অভিমত হলো জাতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিলোপ এবং একটি বিশ^ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্রমেই আন্তর্জাতিকতার আদর্শ মৃর্ত হয়ে উঠে।

 এদের মতে, জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রগুলো একটি বিশ^রাষ্ট্রের মধ্যে সংযুক্ত হলে যথার্থ বিশ^ শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভাব হবে। এভাবে জাতীয়  রাষ্ট্র সমূহের অবসান ঘটলে যুদ্ধের আশঙ্কা রোধ করা যাবে এবং আন্তর্জাতিকতাবাদের পথ প্রশস্ত হবে। 

দ্বিতীয়ত, কিন্তু আন্তর্জাতিকতাবাদ সম্বন্ধে এ বক্তব্য সর্বাংশে সমর্থনযোগ্য নয় । সঠিক অর্থে  এ ধারনাকে আন্তর্জাতিকতাবাদ বলা হয় না। এ হলো বিশ^জনীনতা বা সর্বজনীনতা আবার বিশ^রাষ্ট্রের সৃষ্টি যুদ্ধের আশঙ্কাকে রোধ করতে পারবে ।
তাও জোর দিয়ে বলা হয়। জাতীয়  রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিলোপ সম্ভব ও নয় কাম্যও নয়। আবার জাতীয় রাষ্ট্রের বিনুপ্তি ঘটলেই ভারীকালেকে যুদ্ধের নিগ্রহ থেকে মুক্তি দেয়া যাবে। এমন কোন নিশ্চয়তা নেই । 

               ষষ্ঠ অধ্যায়   


জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতার মধ্যে সম্পর্ক:
বর্তমান বিশে^ সামগ্্িরক পরিস্থিতি আলোচনার পরিপেক্ষিতে আন্তর্জাতিকতার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে অসুবিধা হয় না।বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ^তৃত্ববোধের চেতনা ও আন্তর্জাতিক সেবা ছাড়া মানব সভ্যতার অস্তিত্ব বিপন্ন ।তেমনি সাম্প্রতিক বিশে^র রাজনৈতিক চিন্তাজগতে জাতীয়তবাদ ও আন্তর্জাতিকতা হলো দুটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। নিন্মে জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতার মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করা হলো:Ñ

১। জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতার সহায়ক: আদর্শ জাতীয়তাবাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিকতার কোন বিরোধ নেই। বিভিন্ন জাতির সংকীর্ণ স্বজাত বোধ বা অহমিকা আন্তর্জাতিকতা প্রসারের পথে বাধা সৃষ্টি করে অর্থাৎ বিকৃত বা উগ্র জাতীয়তাবাদই আন্তর্জাতিকতায় পরিপন্থী প্রকৃতি জাতীয়তাবাদ নয়।

প্রকৃতি জাতীয়তাবাদ  বস্তুত একটি মহান আদর্শ। আদর্শ জাতীয়তাবাদ মানুষের মনে স্বজাতি ও স্বদেশের প্রতি ভালবাসার সৃষ্টি করে দেশের স্বার্থে দায়িত্ব সম্প্রাদনে উদ্ধুদ্ধ করে এবং আত্ম ত্যাগে প্রেরনা যোগায়। 

২। জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতার পরিধিকে প্রসারিত করে: আদশর্ক জাতীয়তাবাদ যুদ্ধের বিরোধী এবং যুদ্ধ প্রতিরোধ করে । আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদ রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি সদ্ভাব সহযোগিতা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান প্রভৃতি আদর্শের উপর জোর দেয়। প্রকৃতি জাতীয়তাবাদ বিশ^শান্তি ও নিরাপত্তার পক্ষে।
 
৩। পরস্পর নির্ভরশীল : আদর্শ জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতা পরস্পরের পরিপূরক। জিম্মার্ন এর মতে জাতীয়তাবাদের পথেই আন্তর্জাতিকতায় পৌঁছতে হয়। উদ্দেশ্যের দিক থেকে জাতীয়তাবাদের পথেই  আনÍর্জাাতিকতায় মধ্যে কোন বিরোধ নেই, বরং উভয়ের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান, জাতীয়তাবাদ ও আন্তজাতিকতাবাদ পরষ্পর নির্ভরশীল।
 
৪। জাতীয়তাবাদ ছাড়া আন্তর্জাতিকতা অসম্ভব: 
পৃথিবীর সকল জাতির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের ভিত্তিকে প্রত্যেকে যুক্তিযুক্ত আশা আকঙ্খা বাস্তবায়ন এবং অভাব অভিযোগের নিরসনের পথে আন্তর্জাতিকতার প্রতিষ্ঠা ঘটবে। আন্তর্জাতিকতার স্বার্থে উগ্র ও বিকৃত জাতীয়তাবাদকে পরিহার করা দরকার। 

কিন্তু আদর্শ জাতীয় তাবাদকে বাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক সমুন্নত পরিবেশ গড়ে তোলা কল্পনা বিলাস মাত্র। সান ইয়াৎসেন এর মতে, 'ডব সঁংঃ ঁহফবৎংঃধহফ ঃযধঃ পড়ংসড়ঢ়ড়ষরঃধহরংস মৎড়ংি ড়ঁঃ ড়ভ 
                       সপ্তম অধ্যায়

ৎধঃরড়হধষরংস রভ বি ফরংপধৎফ হধঃরড়হধষরংস ধহফ মড় ধহফ ঃধষশ পড়ংসড়ঢ়ড়ঃধহরফংস বি ঢ়ঁঃ ঃযব পধৎঃ নবভড়ৎব ঃযব যড়ৎংব' .

জাতীয়তবাদ আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রতি হুমকি স্বরুপ:
জাতীয়তাবাদ একটি জাতির মধ্যে নিজ দেশের অভ্যন্তরে জাতীয় সংহতি ও ঐক্য অক্ষুত্র রাখার কথা নির্দেশ করে।

 আন্তর্জাতিকতাবাদ তেমনি বিশে^র স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহকে ঐক্য প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত করে। অতএব জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের সম্পর্কে খুবই ঘনিষ্ট। 
আন্তর্জাতিকতাবাদের বক্তব্য হচ্ছে, আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকতাবাদের বক্তব্য হচ্ছে, আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে সকল প্রকার আস্তর্জাতিক বিরোধের মাীমাংসা করা এবং জাতিতে জাতিতে শান্তি ও সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখা।

 জাতীয়তাবাদকে সংরক্ষণ করেও আন্নর্জাতিকতাবাদ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। বস্তুত মানুষের জীবনের নিরাপত্তা অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ও উন্নতির জন্য শান্তি নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার স্থান সর্বাগে ও সর্বোচ্চ ।


উপসংহার: 
সামগ্রিক আলোচনা থেকেই এটুকু পরিষ্কার ভাবে প্রতিপন্ন হয় যে আদর্শ জাতীয়তাবাদ মানব সভ্যতার সমৃদ্ধি ও উন্নতির সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সংকীর্ন বা উগ্র জাতীয়তাবাদ সাম্রাজ্যবাদ রুপান্তরিত হয়এবং মানব সভ্যতার সংকট সৃষ্টি করে । সতরাং আদর্শ জাতীয়তাবাদ তার কল্যানকর প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে একটি মহান রাষ্ট্রনৈতিক আদর্শ হিসেবে গণ্য হয় । 
আর উগ্র বা বিকৃত জাতীয়তাবাদ তার সা¤্রাজ্যবাদী প্রভাব প্রতিক্রিয়ার পরিপেক্ষিত মানব সভ্যতার শক্র হিসেবে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়। প্রকৃত জাতীয়তাবাদের মধ্যে এর গুনাবলী এবং বিকৃত জাতীয়তাবাদের আদর্শের মাধ্যমে মূর্ত হলেও বিশ^ সভ্যতার এবং মানবতার মধ্যে তা আশীর্বাদ স্বরূপ। 

 
                         
                               গ্রন্থপঞ্জি

১.    ড. অনদিকুমার মহাপাত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞান 
২.    ড. এমাজউদ্দিন আহমদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কথা 
৩.    সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান
৪.    সৈয়দ মকসুদ আলী   রাষ্ট্রীয় সংগঠনের রূপরেখা
৫.    ড. মোঃ মকসুদুর রহমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মৌলনীতি
৬.    প্রফেসর ইয়াসমিন আহমেদ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন