বৈদেশিক বাণিজ্যে বিনিয়োগে সমস্যা ও সম্ভাবনা পার্ট-২

    পঞ্চম অধ্যায় 

বাংলাদেশে বৈদেশিক বাণিজ্যের সমস্যাঃ
     বাংাদেশের মত তৃতীয় বিশে^র একটি অনুন্নত দেশে বিনিয়োগের জন্য নানাবিধ সমস্যার সন্মুখীন হতে হয় । নি¤েœ তাদের বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরা হলো ।

১. অবকাঠামোগত দূর্বলতাঃ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য প্রধান শর্তই হচ্ছে অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধার নিশ্চয়তা প্রদান করা । অবকাঠামোগত দূর্বলতা থাকলে বিদেশিরা বিনিয়োগে সাহস পায় না । তাই যে দেশের সরকার তাদের অবকাঠামোর উন্নতি করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয় না তারা বিদেশী বিনিয়োগের কোন সম্ভাবনাই থাকে না ।

২. আমলাতান্ত্রিক দূর্বলতাঃ বাংলাদেশ তৃতীয় বিশে^র একটি দেশ হওয়ায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতাগুলো তারা উত্তোরাধিকারী সম্পত্তি হিসেবে পেয়েছে । আমলাতান্ত্রিক জটিলতাগুলো দেশের প্রশাসন যন্ত্রের সাথে এমনভাবে মিশে গেছে যে এগুলো ভেদ করে দেশে নতুন করে স্বতন্ত্র্য কোন পদক্ষেপ নেওয়া যায় না । 

৩. নিরাপত্তা ও উদ্দ্যোক্তার অভাবঃ বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদ্দ্যোক্তার অংশগ্রহণ একান্ত আবশ্যক । দেশের সার্বিক অবস্থার কথা বিবেচনায় রেখে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগে আগ্রহী হয় না ।  ফল এটিকে একটি বড় চ্যালেজ হিসেবে দেখা দেয় ।

৪. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাঃ আমাদের দেশের রাজনৈতিক অস্তিতিশীলতা অনেক কম । ফলে যখন তখন কোন বড় অঘটন ঘটার আশংকা থাকে । এই কারণে অনেক বিদেশীরা এদেশে বিনিয়োগ করতে সাহস পায় না । 

৫. আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতিকূলতাঃ  একটি দেশের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা নির্ভর করে সে দেশের আইন শৃঙ্খলা নিভরর্ করে সে দেশের আইন শৃঙ্খলার পরিস্তিতির উপর । অবনীতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারনে বিদেশীরা এদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয় না । 

৬.ব্যাংক সুযোগ-সুবিধার অভাবঃ আমাদের দেশের ব্যাংকিং সেক্টর তেমন অগ্রগতি করতে পারেনি । বিদেশীরা তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং সুযোগ-সুবিধার কথা মাথায় রাখে । ফলে তাদের ব্যাংকিং খাতে সুযোগ সুবিধা না পেলে  বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না । 

   
৭. ট্রেড ইউনিয়নের প্রভাবঃ বাংলাদেশে শিল্প বণিজ্য সেবা এবং অন্যান্য বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোতে রয়েছে ট্রেড ইউনিয়নের অযাচিত হস্তক্ষেপ। তুচ্ছ ঘটনায় শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিসাধন করে থাকে কখনও কখনও অসুচিত দাবী আদায়ের জন্য অন্যতম করে। বাংলাদেশে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষার নামে একশ্রেণীর শ্রমিক ােনতৃত্ব হঠকারীতা ও দুর্নীতি বিদেশি বিনিয়োগ না আসার অন্যতম কারণ। ও ধরনের শ্রমিক নেতারা কাজে ফাঁকি দিয়ে সবসময় অবৈধ সুযোগ সুবিধা আদায়ে সচেষ্ট থাকে। তারা জাতীয় স্বার্থের চেয়ে নিজেদের গোষ্ঠী স্বার্থ বড় করে দেখে। ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য উপযোগী করতে না পারলে তা প্রতিষ্ঠানের জন্য হুমকিত পরিণতি হবে। 


৮. বিরাজমান কর কাঠামোঃ কর কাঠামো বিদোশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট না হবার আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে কর কাঠামো এবং কর প্রশাসনের অব্যবস্থা । কর কাঠামোর অধিকাংশ কর্মকর্তাই দূর্ণীতির শিখরে পৌছেছে ।  এই কারণে বিদেশিরা আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে সাহস পায় না । 

৯. বিদেশে বাংলাদেশের নেতিবাচক ভাবমূর্তিঃ সম্প্রতি বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিয়োগের ভাবমূর্তি নিয়ে অনেক বিতর্ক হচ্ছে । বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক খাটো করে উপস্থাপন করা হচ্ছে । এর ফলে দেশের প্রতি অনেকে বিনিয়োগে উদ্দ্যোগী হচ্ছে না । 

১০. বিনিয়োগ বোর্ডের অদক্ষতাঃ বাংলাদেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ১৯৮৯ সালে যে বিনিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়েছিল । কি›তু তা আমাদের দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে তেমন কোন সফলতার কাজ করতে পারেনি । তাদের অদক্ষতার জন্য এদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়েনি।

১১. দুর্নীতি ঃ বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশ দুর্নীতির উপরে ভাসছে । দুর্নীতি হচ্ছে এমন একটা দুষ্ট ক্ষত যা জনগনের মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের প্রধান প্রতিবান্ধক । ফলে বাংলাদেশের জনগনের প্রত্যাশা পূরণের চাইতে নিজেদের চাহিদার জন্য বেশি উর্দগীব দেখা যায় । এজন্য বিনিয়োগ বান্ধব কোন পরিবেশ তৈরী করা সম্ভব হয় না । তাই দেশে বৈদেশিক বাণিজ ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান অন্তরায় হিসেবে দুর্নীতিকে বিবেচনা করা হয় ।

 

                 ষষ্ঠ অধ্যায়

 

বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সরকারি হস্তক্ষেপঃ
     সরকার বিদেশীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে যে সকল কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তা নি¤েœ উল্ল্যেখ করা হলো ঃ-

১. বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার দেশের বিদ্যমান সরকারি ও বেসরকারী খাতের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে । 

২. বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার স্বচ্ছ ও আর্কষনীয়  নীতিমালা গ্রহণ করেছে । 

৩. ইপিজেট স্খাপন সর্ম্পকিত বেসরকারী আইন প্রনয়ন করছে । ফলে নতুন নতুন ইপিজেড এলাকা নির্মান হচ্ছে । 

৪. বিনিয়োগে আকৃষ্ট্র করার জন্য বিভিন্ন প্রকার প্যাকেজ ঘোষনা করা হয়েছে ।

৫. বিদ্যমান আইনের সংষোধনে করে নতুন নতুন বিনিয়োগ বান্ধব আইন করা হচ্ছে । 
বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগে সমস্যার কারণ
রাষ্ট্রায়ত্তকরণের পর বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন সমস্যা সম্মুখীন হয়। 


১.দক্ষ সংগঠকের অভাব: দক্ষ সংগঠকের অভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পসমূহ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাধীনতার পূর্বে শিল্পসমূহের পরিচালনার ভার যাদের উপর ছিল স্বাধীনতার পর তাদের িেশরভগ কর্মকর্তাকেই বরখাস্ত করা হয়।

 যাদের স্থান দখল করে অদক্ষ নতুন সংগঠকবৃন্দ। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পসমূহের সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়। 

২. সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ পরিচালকের অভাব: রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পসমূহের পরিচালনার ভার যাদের উপর ন্যস্ত করা হয় তাদের সততা ও ন্যায়নিষ্ঠর অভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 


৩. সুচিন্তিত নীতির অভাব: স্বাধীনতার পর দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এঅবস্থায় সুচিন্তিত নীতির অভাবে দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে চরম বিশৃঙ্খলা ও অনিযম দেখা দেয়। 


৪. দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভার: স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পসমূহের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপকের অভাব দেখা দেয়। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যাহত হয়। 


৫. স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি: শুরু থেকেই আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পসমূহে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কালেঅ ছায়া বিরাজ করছে। একারণে অধিকাংশ শিল্প প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। 


৬. পারস্পরিক বিশ^াসের অভাব: আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পসমূহে নিয়োজিত শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ^াস ও আস্থার অভাবে প্রায়ই ভুল বুঝাবুঝি ও দ্বন্দের সৃষ্টি হয় । ফলে উৎপাদন ব্যহত হয়। 


৭. রাজিৈতক প্রভাব: ক্ষমতাসীন রাজিৈতক দলগুলো দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগলোতে দলীয় অযোগ্য ও অনভিজ্ঞ লোক নিয়োগ করে।

 তাছাড়া দলীয় কোন্দলের কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে লে অফ ধর্মঘট ইত্যাদি অপ্রত্যাশিত অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং সবকিছু মিলে উৎপাদন ব্যহত হয় ।

৮. শ্রমিক অসন্তোষ: রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য শ্রমিকদের মাঝে সর্বদাই অসন্তোষ বিরাজ করায় তাদের দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য অনঢ় ভূমিকা পালন করে।
 ফলে শ্রমিক ব্যবস্থাপকের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং উৎপাদন ব্যহত হয়। 


৯. সমন্বয়ের অভাব: রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোরে সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় সেক্টর কর্পোরেশন ও ইউনিট পর্যায়ের সৃষ্টি করা হলেও এদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে এবং খেয়ালিপনার জন্য প্রতি ক্ষেত্রেই উন্নয়ন ব্যাহত হয় । 


১০. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা: রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দরুন আমাদের দেশে হরতাল ধর্মঘট অবরোধ লেঅফ মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি সমস্যা লেগেই আছে। আর এসব সমস্যার প্রত্যক্ষ প্রভাবে শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যাহত হয়। 

১১. উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি: অনুন্নত উৎপাদন ব্যবস্থা কাঁচামালের আমদানি ব্যয় মজুরি বৃদ্ধি ব্যয় সংকোচন নীতি অনুসরণ না করা ইত্যাদি কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পসমূহের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে এ শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোদে তেমন উন্নয়ন হয় নি। 

                                                                                       

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন